দশজন নিয়ে খেলেও কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। শনিবার (৩ জুলাই) সকালে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে তারা ১-০ গোলে হারিয়েছে চিলিকে। প্রথমার্ধে গড়পড়তা খেলার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ এক গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু গোল উদযাপনের রেশ না কাটতেই মারাত্মক ফাউল করে লাল কার্ড দেখে দলকে বিপদে ফেলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস।
ম্যাচের অর্ধেকটা সময় ১০ জন নিয়ে খেলেও ওই গোল ধরে রাখতে পেরেছে তিতের শিষ্যরা। দলের জয়ে একমাত্র গোলটি করেন লুকাস পাকুয়েতা। মঙ্গলবার সেমিতে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ পেরু। প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে তারা প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারায়।
ম্যাচের বেশিরভাগ উল্লেখযোগ্য ঘটনা দ্বিতীয়ার্ধে। ৪৬ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার পর ৪৮ মিনিটে ব্রাজিল পরিণত হয় ১০ জনের দলে। তবে চিলির আক্রমণ সয়ে বাকিটা সময়েও সুযোগ তৈরি করতে পারে শিরোপা প্রত্যাশীরা। শেষ পর্যন্ত গোল ধরে রেখে জেসুসের ভুলকে গলার কাঁটা হতে দেয়নি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
খেলার শুরুতেই আক্রমণ পেতে থাকে চিলি। ১০ মিনিটে তৈরি হয় বলার মতো সুযোগ। মৌরিসিও ইসলা কাছ থেকে বল পেয়ে এডুয়ার্ড ভার্গাস কাজে লাগাতে পারেননি। তার শট যায় ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডারসনের হাতে। ৫ মিনিট পর প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ আসে ব্রাজিলের। চিলির ডিফেন্ডার ফ্রান্সিস্কো সিয়েরালতা ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন রিচার্লিশন। কিন্তু তার দূরপাল্লার শট আটকে যায় ক্লাদিও ব্র্যাভোর গ্লাভসে।
২২ মিনিটে দারুণ সুযোগ আসে ব্রাজিলের। কিন্তু নেইমারের ক্রস থেকে বল পেয়ে ভলিতে বাইরে মারেন রবার্তো ফিরমিনো। ২৭ মিনিটে ব্রাজিলের আক্রমণ প্রতিহত করার পর ক্ষিপ্র প্রতি আক্রমণে যায় চিলি। ব্রাজিল ডিফেন্সের ভুলে বেশ ভালো সুযোগ এসেছিল তাদের সামনে। কিন্তু এডারসনকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ভার্গাস। তার শট ঠেকিয়ে দেন এডারসন।
৩২ মিনিটে চিলি ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে বাইরে মারেন দানিলো। দুই মিনিট পর ইউজেনিও মেনার ক্রস থেকে গোলের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি চিলি। বিরতির আগে সেরা সুযোগ পেয়েছি জেসুস। নেইমার দারুণ এক বল বানিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। ডিফেন্স চেরা সেই পাস ধরে কেবল গোলরক্ষক সামনে ছিলেন জেসুসের। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড ব্র্যাভোকে পরাস্ত করতে পারেননি।
বিরতি থেকে ফিরেই গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। ফিরমিনোর জায়গায় বদলি নেমেই বাজিমাত করেন পাকুয়েতা। বা দিক থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণ ধীরে ধীরে যায় বক্সের দিকে। ফ্রেডের কাছ থেকে বল পেয়ে নেইমার দেন পাকুয়েতাকে। পাকুয়েতা ফের বল নেইমারের পায়ে দিয়ে বক্সে ঢুকেন। নেইমারের আবার বাড়ানো বল পেয়ে দারুণ দক্ষতায় জালে জড়ান তিনি।
গোল উদযাপনের রেশ কাটতে না কাটতেই এক মিনিট পরই বিশাল ধাক্কা খায় ব্রাজিল। গোল করতে ব্যর্থ জেসুস ডোবান দলকে। মারাত্মক ফাউল করে সরাসরি দেখেন লাল কার্ড। খেলার প্রায় অর্ধেক বাকি থাকতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা।
৬০ মিনিটে সেটপিস থেকে বল জাড়ে জড়িয়েছিল চিলি। কিন্তু অফ সাইডের কারণে বেঁচে যায় ব্রাজিল। মিনিট ছয়েক পর মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ছুটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে ছিলেন নেইমার। বক্সে ঢুকে তার নেওয়া শট অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ব্র্যাভো। ৬৯ মিনিটে মেনার ক্রস থেকে গোল পেতেই পারতেন বেন বেরেটন। তার হেড এডারসনের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়ে লাগে বারে। পরের মিনিটেই প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরি করেছিলেন নেইমার। তার পাস থেকে দানিলো মারেন ব্র্যাভোর হাতে।
৭৮ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ভার্গেসের নেওয়া জোরালো গতির শট ঠেকিয়ে দেন এডারসন। ম্যাচের বাকিটা সময় রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ব্রাজিলকে। মাঝেমধ্যে মিলেছে প্রতি আক্রমণের সুযোগ। বেশিরভাগ সময় রিচার্লিসন ও নেইমারের তৈরি করা সুযোগ গিয়ে থেমেছে চিলির বক্সের।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চিলি চাপ বাড়িয়েও লাভ করতে পারেনি। রক্ষণ শক্ত করে রাখা ব্রাজিল দাঁতে দাঁত চেপে ঠেকিয়ে দেয় ম্যাচের বাকিটা সময়।