আইপিএলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দল থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন কাগিসো রাবাদা, কুইন্টন ডি ককরা। ফলে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগেই খর্বশক্তির হয়ে পড়েছিল দলটি। পাকিস্তান সে সুযোগটাই নিয়েছে। শেষ ম্যাচটা ২৮ রানে জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছে। গড়েছে একগাদা রেকর্ডও।
আগের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিলেন ফখর জামান, তৃতীয় ওয়ানডেটা যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। দারুণ এক শতক তুলে নিয়ে ১০১ রানে থেমেছেন, দলকে দিয়েছেন বড় স্কোরের ভিত। সঙ্গী ইমাম উল হক ৫৭ রান করে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তাকে। এরপর সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্ক দেখল বাবর আজমের প্রদর্শনী। দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন ৯৪ রানে, ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে হাসান আলী এনে দেন পাকিস্তানকে ৩২০ রানের পুঁজি।
জবাবে ভালো শুরুর পরও ১৪০ রানেই ৫ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এরপর কাইল ভেরেইন ও এইডেন মারক্রামের ১০৮ রানের জুটিতে জয়ের আশা টিকে থাকে স্বাগতিকদের। কিন্তু দলীয় ২৪৮ রানে জুটিটা ভাঙতেই দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ জয়ের আশাটাও যেন ফিকে হয়ে আসতে থাকে। এরপর মোহাম্মদ নওয়াজ ও শাহিন আফ্রিদির ৩ উইকেট শিকারে ২৯২ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। পাকিস্তান পায় ২৮ রানের জয়।
এই জয় অনেক রেকর্ড এনে দিয়েছে পাকিস্তানকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সিরিজ জিতল দলটি, কোনো দক্ষিণ এশীয় দলের যেখানে সিরিজ জয় নেই একটির বেশি। আগের ম্যাচের ১৯৩ রানের পর তৃতীয় ওয়ানডেতে ১০১ রানের ইনিংস খেলে তৃতীয় সফরকারী ব্যাটসম্যান হিসেবে ফখর আজম পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টানা সেঞ্চুরির দেখা। এর আগে এ কীর্তি ছিল দুই ইংলিশ জো রুট ও কেভিন পিটারসেনের। টানা সেঞ্চুরি তো দূর অস্ত, এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটির বেশি সেঞ্চুরি ছিল না পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানের। এ শৃঙ্ঘে ফখরই প্রথম।
ফখর জামান এ সিরিজে করেছেন ৩০২ রান, যা পাকিস্তানের হয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৩৬০ রান করে পাকিস্তানের হয়ে তিন ম্যাচের এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটা বাবর আজমের দখলে, ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গড়েছিলেন এ কীর্তি। ফখরের রেকর্ড এখানেই শেষ নয়। তৃতীয় ওয়ানডেতে ইমামের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে তুলেছেন ১১২ রান, যার ফলে দুজনের শতরানের জুটির সংখ্যা দাঁড়াল ৫-এ। পাকিস্তানের হয়ে এতগুলো শতরান নেই আর কোনো উদ্বোধনী জুটির।
সরফরাজ আহমেদ এদিন ক্যাচ নিয়েছেন তিনটি, ফলে কামরান আকমল, মইন খান ও রশিদ লতিফের পর চতুর্থ পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক হিসেবে ৩০০ আন্তর্জাতিক ডিসমিস্যালের কীর্তি গড়লেন তিনি। এদিন তিন উইকেট নিয়ে মাত্র ২৫তম ওয়ানডেতে ৫০তম উইকেটের দেখা পেলেন শাহিন আফ্রিদি। পাকিস্তানিদের মধ্যে শুধু হাসান আলীরই এর চেয়ে কম ম্যাচে ৫০তম উইকেটের কীর্তি আছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩২০/৭ (ইমাম ৫৭, ফখর ১০১, বাবর ৯৪*, হাসান ৩২; মারক্রাম ৪৮-২, ফেলুকওয়ায়ো ৩৭-১, মহারাজ ৪৫-৩, স্মাটস ৬৭-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৩ ওভারে ২৯২ (মালান ৭০, ভেরেইন ৬২, ফেলুকওয়ায়ো ৫৪; আফ্রিদি ৫৮-৩, হাসান ৭৬-১, রউফ ৪৫-২, উসমান ৪৮-১, নওয়াজ ৩৪-৩)
ফল: পাকিস্তান ২৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে পাকিস্তান।
ম্যাচসেরা: বাবর আজম।
সিরিজসেরা: ফখর জামান।