তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছে মানুষের। তার মধ্যেই সৌরঝড়ের সতর্কতা দিল নাসা। আগামী দু’দিন আরও উত্তাল হয়ে উঠবে সূর্যের রশ্মি। আগুনে রশ্মিরা তেড়ে আসবে পৃথিবীর দিকে। সৌরঝড় আর সৌরবায়ুর হলকায় পৃথিবীর নানা জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
নাসা জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৯ কোটি মাইল দূরে সূর্য থেকে ছুটে এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে গনগনে সৌররশ্মি। পূর্বাভাস বলছে, আগামী দু’দিন সৌরঝড়ের দাপট থাকবে পৃথিবীতে। কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চারপাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। দুই মেরুতে ঘনঘন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে মেরুজ্যোতি। পৃথিবীতে হামলা চালাতে পারে সূর্যের প্লাজমা থেকে আসা ‘করোনাল মাস ইজেকশান (সিএমই)’ও।
কিছুদিন আগেই ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) জানিয়েছিল, সূর্যের পরিমণ্ডলে একটি ছিদ্র লক্ষ্য করা গেছে। সেই ফাটল পথেই প্রবল বেগে সৌরবায়ু ছিটকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে। এর প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে।
সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, অসম্ভব শক্তিশালী সৌরকণারা যদি কোনওভাবে পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি চলে আসে তাহলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হবে। সৌরকণাদের সম্মিলিত শক্তি যদি বেশি হয়, তাহলে পৃথিবীর রেডিও বা টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিতে পারে।
সৌরঝড়ের কী প্রভাব পড়বে পৃথিবীতে?
আমাদের পৃথিবীর যেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে, সূর্যের তেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে। সূর্যের পিঠ (সারফেস) ও তার উপরের স্তর যাকে বলে সোলার করোনা। সারফেসের গড় তাপমাত্রা ৫৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কোথাও ৫৮০০ ডিগ্রি আবার কোথাও ৫২০০ ডিগ্রি সেলসিয়ারের কাছাকাছি। করোনার তাপমাত্রা সেখানে প্রায় ২ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কখনও তারও বেশি। এই তাপমাত্রার তারতম্য হতে থাকে সবসময়।
এই করোনা স্তর যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকেই সৌরঝড়ের জন্ম হয়। এই করোনা উচ্চতাপমাত্রার প্লাজমা আবরণে ঢাকা। এখান থেকেই বেরিয়ে আসে তড়িদাহত কণার স্রোত। প্রচণ্ড গতিতে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। একেই বলে সৌরঝড়। সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ শক্তি রয়েছে। মাঝে মাঝে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ হয় ঠিক পরমাণু বোমা ফাটার মতো। সেই শক্তি বেরিয়ে আসে যাকে বলে ‘করোনাল মাস ইঞ্জেকশন।’ এর ফলেই প্রচণ্ড গতির সৌরকণা ও সৌরঝড় পৃথিবীর উপর দিয়েও বয়ে যায়।
সৌরঝড় আছড়ে পড়লে তার শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ও আয়নগুলো পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ককে তছনছ করে দিতে পারে। সৌরঝড় (সোলার স্টর্ম) যার দ্বারা স্যাটেলাইটগুলো আক্রান্ত হয় ও টেলি যোগাযোগে বড় ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্যও দায়ী এই সৌরবায়ু, সৌরঝড় এবং সৌর বিকিরণ।