শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শিশু ওহিকে উদ্ধারের দাবিতে ঘটনাস্থল তোরাবগঞ্জ অগ্রণী রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। ওহির মা মরিয়মসহ আত্মীয়-স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এতে অংশ নেয়।
এসময় কান্না জড়িত কণ্ঠে দুই হাত তুলে মরিয়ম বেগম বলেন, ফিরিয়ে দে আমার বুকের মানিককে। পাশানিরে, কেমনে নিয়ে গেলি আমার অবুঝ শিশুরে। যে দিকে তাকাই, সেই দিকেই আমি তাকেই চোখে দেখিরে। ফিরে দে, আমার অবুঝ শিশুরে। পাশানিরে, ক্ষমা করব না তোরে আমি আখিরাতে।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিশুর মাসহ স্বজনরা। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিক উল্যাহ বলেন, শিশুটিকে তার মা একজন আত্মীয়ের কাছে রেখে যায়। বিষয়টি বিদ্যালয়ের কেউ জানতো না। শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি শোনা মাত্রই আমরা পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে সিসি ক্যামেরা যাচাই করে শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ করছে। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মতিন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিক উল্যাহ, কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বিপ্লব, ওহির দাদা চৌধুরী মাঝি, মামা সোহাগ মিজি ও স্বজন বজলুর রহমান প্রমুখ।
ওহি সদর উপজেলার তেওয়ারীঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের আবুধাবি প্রবাসী মো. সেলিমের মেয়ে। তার মা মরিয়ম ওই বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষক।
পুলিশ ও ওহির মা মরিয়ম বেগম জানায়, চুরি হওয়া ওহির বড় বোন সাবিহা ইসলাম মিহি (৬) অগ্রণী রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি শ্রেণির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে মিহি যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এতে ওহিকে নিয়ে তার মা মরিয়মও বিদ্যালয়ে যায়। মিহিকে সাজানোর জন্য চুলের ক্লিপ ও বেল্ট আনার জন্য বিদ্যালয়ের পাশেই বাজারে যান মরিয়ম। এসময় জোর করে মায়া নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী ওহিকে তার কাছে রেখে দেয়। মায়া সম্পর্কে মরিয়মের ফুফাতো বোন হয়। এর মধ্যেই মায়ার কোল থেকে অচেনা এক নারী ওহিকে নিয়ে যায়। বাজার থেকে ফিরে ওহির কথা জিজ্ঞেস করলে মায়া জানায় সে অন্য একজনের কোলে রয়েছে। কিছুক্ষণ পরে ওহিকে আনতে বললে জানায়, অন্য এক নারী ওহিকে কোলে নিয়েছে। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে বিদ্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা যাচাই করে দেখতে পায় মাথায় লাল হিজাব, মুখে মাস্ক ও কালো বোরকা পরিহিত এক নারী শিশুটিকে কোলে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা যাচাই করেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
কমলনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল জলিল বলেন, শিশু ওহিকে উদ্ধারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাকে উদ্ধার করতে।