বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনটি বিষয়কে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভায় কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল যথাসময়ে করে সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আগামী সাধারণ নির্বাচনকে। এই নির্বাচনকে প্রশ্নাতীতভাবে অংশগ্রহণমূলক করতে কৌশলপত্র প্রণয়নের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বিপরীতে বিএনপি, গণফোরামসহ ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের অভাবনীয় পরাজয় ঘটে। আওয়ামী লীগ এককভাবেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ২৪ জনকে মন্ত্রী, ১৯ জনকে প্রতিমন্ত্রী এবং তিন জনকে উপমন্ত্রী করা হয়। সর্বশেষ এক জনকে প্রতিমন্ত্রী করায় প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা এখন ২০।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় মন্ত্রিসভা গঠন করে। মাঝে ক্ষুদ্র পরিসরে দপ্তর বদল ছাড়া বড় কোনো রদবদল মন্ত্রিসভায় হয়নি। সম্প্রতি অবশ্য মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদলের সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যেহেতু এ বিষয়ে একক ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব হয় না। তবে এবার অনেকে বলছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং এর প্রেক্ষাপট তৈরি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সমমনা নির্বাচনি বন্ধু দলগুলোর কোনো কোনো নেতার পারস্পরিক পালটাপালটি মন্তব্য এবং অনেকের মন্ত্রিসভায় যোগদানের ইচ্ছা ইত্যাদি বিবেচনা করে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের জায়গা দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাউকে কাউকে মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতে হতে পারে।
অন্যদিকে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দূর করে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনের জন্য তৈরি করার উদ্দেশ্যে দলের মধ্যেও কিছু পরিবর্তনের তাগিদ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল করার কথা। তিন বছর মেয়াদি সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। ঐ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র মরহুম সৈয়দ আশরাফুলকে বাদ দিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া যুবক ও তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দলের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এতসব যুবক ও তরুণ নেতৃত্ব থাকার পরেও ৪৩ জেলায় কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। যদিও করোনা মহামারি একটি বড় কারণ, তবু অনেকে বলছেন জেলায় জেলায় দলীয় কোন্দল বেড়েছে।
কারো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে প্রশ্রয় দেওয়ার। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে বিএনপিপন্থিদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরিসহ ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করার অভিযোগও আছে বিস্তর। এসব কাজে যারা জড়িত, তাদের ক্ষমা করা হবে না মর্মে একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তাতেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে আগামী সাধারণ নির্বাচন, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেই নির্বাচনও কীভাবে অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তার একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের তাগিদও রয়েছে সরকার ও দলের মধ্যে। কারণ বিগত নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী জোট অংশ নিলেও ভবিষ্যতে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। ইতিমধ্যে তারা সংসদীয় উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনে রদবদল, সর্বোপরি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তাদের। এসব দাবি উপেক্ষা করে বা মিটিয়ে নিয়ে কীভাবে নিজেদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা যায়, তার একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশলপত্র রচনার কথাও ভাবা হচ্ছে।