রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা তালেবানের নতুন রাষ্ট্রদূতের কাগজপত্র গ্রহণ করেছে। চার বছর আগে মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় আসে, আর তখন থেকেই রাশিয়া তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আফগানিস্তানের ইসলামিক সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদনশীল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিকাশে গতি দেবে।’
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বৃহস্পতিবার কাবুলে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভের সঙ্গে বৈঠকের একটি ভিডিও এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেছেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ হবে। এখন স্বীকৃতি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর রাশিয়া সবার চেয়ে এগিয়ে।’
এই পদক্ষেপের ওপর ওয়াশিংটনের নজর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোটি কোটি সম্পদ জব্দ করেছে ও তালেবানের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাত আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থনকারী মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে। মস্কো মার্কিন প্রত্যাহারকে ‘ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছিল, তখন থেকে তালেবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তালেবানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদার ও মিত্র হিসেবে দেখছে রাশিয়া।
মস্কোর সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক কীভাবে বাড়ল
২০২২ ও ২০২৪ সালে তালেবানের প্রতিনিধিরা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি বড় অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। গত বছরের (২০২৪) অক্টোবরে তালেবানের একজন শীর্ষ নেতা মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র’ বলে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে, আইএসকেপি (আইএসআইএস-কে) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য চান, যা আফগানিস্তান ও রাশিয়ায় বড় ধরনের হামলার জন্য দায়ী।
এই বছরের এপ্রিল মাসে (২০২৫) রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে বাদ দেয়। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছিলেন, কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসাটা একটি বাস্তবতা, তাই মস্কোর উচিত তালেবানের প্রতি বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করা, কোনো পুরোনো মতাদর্শে আটকে না থাকা।
গত ২০ বছরে তালেবানের প্রতি রাশিয়ার মনোভাব অনেক বদলেছে। ১৯৯৪ সালে আফগান গৃহযুদ্ধের সময় তালেবানের জন্ম হয়। এই দলটি তৈরি হয়েছিল মূলত ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সাবেক মুজাহিদিন যোদ্ধাদের নিয়ে, যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করত। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সেই ভয়ংকর পরাজয় সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনকেও ত্বরান্বিত করেছিল।
২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে সন্ত্রাসী হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে, কারণ তারা উত্তর ককেশাসের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করত। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর, রাশিয়া ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।

তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর রাশিয়াই প্রথম দেশ যারা কাবুলে একটি ব্যবসায়িক অফিস খোলে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্যাস সরবরাহের জন্য আফগানিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আফগান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় না। জাতিসংঘও এই প্রশাসনকে ‘তালেবানের কার্যত কর্তৃপক্ষ’ হিসেবেই উল্লেখ করে।