গত ২৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন কবি, অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রকাশক তারেক মাহমুদ। গতকাল জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তার গ্রামের বাড়ি পাবনার স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে।
উল্লেখ্য, তারেক মাহমুদ, দীর্ঘদিন ঢাকায় একা জীবনযাপন করছিলেন। তার ২২ বছর বয়সী এক পুত্র আছেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক বছর আগেই। সব মিলিয়ে মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন নিজের সৃষ্টিকর্মসহ অভাবী জীবনের অভিমান আর হতাশা।
ক’দিন আগেই তিনি তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘কেন জানি মনে হয় ইন্ডাস্ট্রিতে আমি এক স্যাংশানপ্রাপ্ত অভিনেতা! এত কম মূল্যের অভিনয় শ্রমিক তবুও গেরস্থ জোটে না।’ অন্যদিন লিখেছেন, ‘আজকে বেশ কিছু টাকার দরকার। কয়েকটা সিঙ্গেল নাটকের স্ক্রিপ্ট, একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার স্ক্রিপ্ট রেডি আছে। কেনার মতো কেউ আছেন? প্রয়োজনে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আমার নাম রাখারও দরকার নেই। টাকার দরকার। কবিতার পা্লুলিপি, উপন্যাসের কথা না হয় বললামই না। সেই দয়াল প্রকাশক আমার ললাটে নেই, যারা সম্মানী দিয়ে পা্লুলিপি নেবেন।’ নিজের নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে তারেক মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমাদের মতো যাদের বয়স ৫০-এর কোঠায় বা আশেপাশে এবং একা থাকেন তাদের জন্য দিনশেষে জীবনটা একটু অসহায়বোধ মনে হয়। নিঃসঙ্গতা তাদেরকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যায়। সে হতে পারে নারী বা পুরুষ।’
শুধু তাই নয়, টাকার অভাবে নিজের নির্মিত ‘চটপটি’ সিনেমাটির শুটিং শেষ হলেও মুক্তি দিতে পারেননি তিনি। তার অকাল প্রস্থানে কবি, অভিনয় এবং নির্মাণ মহলে নেমেছে শোকের ছায়া। উঠেছে প্রতিবাদও। কারণ হতাশা কাটিয়ে তারেক মাহমুদকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য হাতটা বাড়ায়নি কাছের কেউ!
তার ছবির অভিনয়শিল্পী নিরব বলেন, ‘মাস দুয়েক আগেও তারেক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। ছবিটির মুক্তি নিয়ে তার অনেক কষ্ট ছিল। আমাকে বলেছিলেন, ছবিটা মুক্তি দিতে চাই। আমাকে একটু স্পন্সর ম্যানেজ করে দাও। ছবি বানাতেই তো আমার সবকিছু শেষ। আর পারছি না। দেখো কিছু করা যায় কি-না।’ অভিনেতা কচি খন্দকার লিখেছেন, ‘অদ্ভুত জীবন তারেক, তোর চলে যাওয়া মানছি না। এটা মিথ্যা হোক।’ এদিকে তারেক মাহমুদের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী, অভিনয়শিল্পী আদনান আল ফারুক হিল্লোল, রওনক হাসান, পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলুসহ শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই।
মূলত কবি হিসেবে ১৯ শতকের শেষাংশ থেকে রাজধানীর আজিজ মার্কেটের নিয়মিত মুখ ছিলেন তারেক মাহমুদ। কবিতার আড্ডা থেকেই তার অভিনয় আর নির্মাণে প্রবেশ। কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, চলচ্চিত্র, নাটক, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে তার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালার বাঁশি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে।