আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে শুনেছি, তা সত্য হলে আমি খুশি। আমি টেকিনক্যাল পারসন না, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি দেখিওনি। তবে তারা যা করেছে, তা সত্যি হলে প্রশংসনীয়।’
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কার্যালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গোয়েন লুইস বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। আইনটিকে ভালোভাবে যাচাই করার মতো কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি না আমি। কিন্তু এই পরিবর্তনেই আমি খুব খুশি। আইনে কী পরিবর্তন করা হয়েছে, তা আমাদের ভালো করে দেখতে হবে। তবে ঘটনা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন আর নেই, সেখানে নতুন আইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’
এ সময় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধির প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘বাস্তবায়নের মধ্যে দেখতে চান, তা তিনি বলেননি, আমি যদি তার ইংরেজি ঠিকমতো বুঝে থাকি। তিনি বলেছেন, নতুন যে আইনটি করা হয়েছে, সেটা এখনও তিনি সম্পূর্ণভাবে দেখেননি। এটা স্বাভাবিক। আপনারাও মনে হচ্ছে, কেউ দেখেননি। আর দেখেননি বলে তিনিও সম্পূর্ণভাবে মন্তব্য করতে পারছেন না। কিন্তু এটির যে পরিবর্তন এসেছে এবং যা শুনেছেন, তা যদি এসে থাকে, তাহলে তা ভালো হয়েছে। তিনিও খুশিও হয়েছে। শি হ্যাজ ইউজড দ্য ওয়ার্ড গ্ল্যাড।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল আপনাদের যা বলেছি, তার (গোয়েন) সঙ্গে আলোচনায়ও সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে একই কথা বলেছি, যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের একটি দফার মধ্যে আছে, সেহেতু এটিকে রহিত করা হয়েছে এবং আল্টিমেটলি এটিকে রহিত করা হবে।
টেকনিক্যাল ধারাগুলো একই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব টেকনিক্যাল ধারা ছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও সেই টেকনিক্যাল ধারাগুলো আছে। সে জন্য আমি সবসময় বলে এসেছি, এটি পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনও হয়নি, আবার সম্পূর্ণভাবে যদি কেউ বলে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন রহিত করা হয়েছে, সেটিও ঠিক হবে না। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে এবং পরিবর্তনগুলো এতোই বেশি ছিল যে, তখন যদি আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামটি রাখতাম, তাহলে নামটি হতো ডিজিটাল নিরাপত্তা (সংশোধিত) আইন।’
আনিসুল হক বলেন, যখনই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পড়তে হতো, ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশোধনী আইনটিও সঙ্গে রাখতে হতো। তা কনফিউজিং (বিভ্রান্তিকর) হতো। যে কারণে নাম পাল্টে নামকরণ করা হয়েছে। আর সাইবার নামটি রাখা হয়েছে ব্যাপ্তি বাড়াতে। যে কারণে এটিকে সাইবার নিরাপত্তা আইন নাম দেয়া হয়েছে।
আগে যে মামলাগুলো হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে, তার পরিণতি কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করবো। কারণ হচ্ছে, আইনের অবস্থান হচ্ছে, যেসব অপরাধ পুরনো আইনে করা হয়েছে, সেই পুরনো আইনে তাকে আদালত শাস্তি দিতে পারেন। সেখানে আমরা চিন্তাভাবনা করবো, এই আইনে যেহেতু শাস্তির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো হয়েছে এবং সরকারের ও আইনসভার উদ্দেশ্য সেই কমানোটা যাতে বাস্তবায়ন হয়, সেই চেষ্টা করা।’
সাইবার নিরাপত্তা আইন জনগণেরর জন্য আরও ভোগান্তির কারণ হবে বলে বিএনপির মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি ঢালাওভাবে মন্তব্য করতে চাই না। যেহেতু তারা পড়েননি, তারা বোঝেননি বলেই এই মন্তব্যটা করেছেন। অংশীজনরা দেখুক, আপনারাও দেখেন, তারপর আপনারা যদি আলাপ করতে চান।’