ভেতরের খবর, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই মাঠে গড়াবে জাতীয় লিগ। সম্ভাব্য তারিখ ২২ মার্চ। এরই মধ্যে দল গঠনের কাজও একরকম চূড়ান্ত। আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচকরা বসেছিলেন দল সাজানোর কাজে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর স্বীকারোক্তি, ‘আমরা দলগুলো তৈরি করতে অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গে বসি। সেটার জন্যই বসেছিলাম। আমরা ৮টা ডিভিশনের সঙ্গে বসেছি এবং মোটামুটি ১৮ জন করে দল তৈরি করে দিয়েছি।’
নান্নু যোগ করেন, ‘২২ মার্চ জাতীয় লিগ শুরুর সম্ভাব্য সূচি নির্ধারণ করা আছে। তবে মাঠে গড়ানোর আগে ক্রিকেটারদের টিকা দিতে হবে। আমরা আমাদের কাজ এগিয়ে রেখেছি। দলগুলো প্রায় প্রস্তুত করে দিয়েছি যেন অনুশীলন শুরু করে দিতে পারে।’ জাতীয় লিগের উইকেট নিয়ে প্রতিবার কথা হয়। কিন্তু ঘুরে ফিরে দেখা যায়, উইকেট সেই আগের মতই থাকে। তবে প্রধান নির্বাচক নান্নুর আশা, এবার ভালো উইকেটেই খেলা হবে।
তার ব্যাখ্যা, ‘যেহেতু এক বছর কোনো ঘরোয়া ক্রিকেট হয়নি, সব মাঠেই কিন্তু নতুন করে খেলা শুরু হচ্ছে। সেই হিসেবে আমরা অবশ্যই ভালো উইকেট চাচ্ছি। আশা করছি যে ভালো উইকেট পাব। এটাই আশা করছি এনসিএলের চারটি ভেন্যু থেকে। আশা করছি অন্তত দুটো ভেন্যুতে দুই রকমের খেলা হবে। যেন একটা দল দুই ভেন্যুতে দুই রকম উইকেট পায়। সবাই যেন সব ধরনের উইকেটে অভ্যস্ত হয়। যেহেতু উইকেটগুলো একদম ফ্রেশ পাচ্ছি। আশা করছি চ্যালেঞ্জিং উইকেটই পাব।’
উইকেটের চেয়েও জাতীয় লিগ এলেই আরও একটি প্রশ্ন বেশি ওঠে। সেটা হলো-জাতীয় দলের বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটাররা লিগে খেলবেন কি না। এমনিকে ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বা ছোটখাটো ইনজুরির কথা তুলে তারা জাতীয় লিগ খেলা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখেন।
এবার জাতীয় লিগ মাঠে গড়ালে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা কয় রাউন্ড খেলবেন? প্রধান নির্বাচকের আশাবাদি উচ্চারণ, ‘এখন টেস্ট দলের যে ক্রিকেটাররা দেশে আছে (মুমিনুল, সাদমান, তাইজুল, সাইফ, ইবাদত, রাহি) ওরা দুই রাউন্ড খেলতে পারবে। আমাদের তৃতীয় রাউন্ড হবে ৫ এপ্রিল থেকে। সেটা নিয়ে আলোচনা করছি।’
কিন্তু যারা নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে দেশে ফিরবেন, তারা কি জাতীয় লিগ খেলে তারপর শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট খেলতে যাবেন? নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর হয়তো দিন দশেক সময় হাতে পাওয়া যাবে, তার মধ্যে অন্তত এক রাউন্ড খেলা সম্ভব। তাহলে কি তামিম, মুশফিক, লিটন, মিরাজরা ওই এক রাউন্ড খেলবেন?
এমন প্রশ্নে কোনো ইতিবাচক জবাব বা পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই প্রধান নির্বাচকের কাছে। নান্নুর কথা, ‘শ্রীলঙ্কায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাওয়ার আগে যদি একটা রাউন্ড খেলা যায়, আমরা সেই চেষ্টা করব।’
তার মানে ব্যাপারটা চেষ্টার পর্যায়ে থাকবে। কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। কেন তা থাকবে না? তারকারা দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলেন খুব কম। আর ৩-৪ দিনের ম্যাচ কম খেলার কারণেই তামিম, মুশফিকসহ সবার পারফর্যোন্সের গ্রাফ তলানিতে। শুধু ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাবে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্বল ও অনভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে টেস্টে ভরাডুবি ঘটেছে।
এবার শ্রীলঙ্কায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার আগে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ প্র্যাকটিস বা ৩-৪ দিনের ম্যাচ খেলা তাই খুবই জরুরী। তামিম, মুশফিক, লিটন, মিরাজ, মিঠুনরা নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর দেশে ফিরে একটু চেষ্টা করলেই জাতীয় লিগের এক রাউন্ড খেলে নিজেদের খানিকটা প্রস্তুত করে নিতে পারবেন।
কিন্তু সেটা খেলতে শর্ত জুড়ে দেয়া তো দূরে থাক, খোদ প্রধান নির্বাচকই আমতা আমতা করছেন। বলছেন, চেষ্টা করা হবে। অথচ তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিতে পারেন, নাহ, কোন ওজর আপত্তি চলবে না। দেশে ফিরে এক রাউন্ড জাতীয় লিগ খেলেই শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে যেতে হবে।
কিন্তু বাস্তবে তা বলা হয়নি। হবেও না। তাহলে তারকারা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে মনোযোগী হবেন কি করে? এই ভরাডুবি, হার আর শিখতে থাকার গল্প আর কতদিন শুনতে হবে টেস্ট ক্রিকেটে?