দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন বাড়ছে শীতের প্রকোপ। তাপমাত্রা নিচে নামার কারণে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। সন্ধ্যার পর থেকে হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঘন কুয়াশা পড়ে, যা সকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। ফলে শীতের কারণে এখনই দুর্ভোগে পড়া শুরু করেছে খেটে খাওয়া ও সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
রোববার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, এক মাস ধরে উত্তর থেকে বয়ে আসা হিম বাতাসের কারণে দিন দিন এ জেলায় তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। গত কয়েক দিনে ১৬ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ২০ দিন ধরে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হিম বাতাস বইতে শুরু করে এ জেলার ওপর দিয়ে। ভোর রাত পর্যন্ত শিশির বিন্দু এবং সকাল পর্যন্ত মাঝারি কুয়াশায় ঢেকে থাকে পুরো জেলা। ফলে কনকনে শীত অনুভূত হওয়ায় এ জেলার মানুষ গরম কাপড়ের আশ্রয় নিয়েছে এবং কাজে যেতেও তাদের দেরি হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার ভ্যানচালক রেজাউল করিম বলেন, কয়েক দিন ধরে শীত নেমে যাওয়ায় আগের ভ্যানে যাত্রী পাই না। শীতের কারণে সকাল ও সন্ধ্যার পর বাজারে মানুষ কম আসে। তাই যাত্রী না পেয়ে বেশির ভাগ সময় বেকার হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।
পাথরশ্রমিক হাজেরা বেগম বলেন, শীতের কারণে সময়মতো কাজে যেতে পারছি না। আমি গরিব মানুষ। কাজ করে সংসার চালাই। এখনো শীতের কাপড় সংগ্রহ করতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, রোববার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে তাপমাত্রা দিন দিন আরও হ্রাস পাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ঠাকুরগাঁও
এদিকে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও হিমালয় পর্বতের কাছাকাছি হওয়ায় শীতের প্রকোপ বাড়ছে। রাতে বৃষ্টির মতো শীত আর সকালে ঘন কুয়াশা। দীর্ঘ সময় থাকা কুয়াশায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষিজীবী মানুষ। শীতের আগমনে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে ভোরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ জনপদ। সাতসকালে বয়ে আসা হিমেল বাতাসে শীতের পোশাক অনিবার্য হয়ে উঠছে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ছিল ঘন কুয়াশার খেলা। মাঠে মাঠে ধানক্ষেতে কুয়াশা আর শিশির বিন্দুর রাজত্ব ছিল।
স্থানীয় কৃষক খায়রুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার অনেক আগেই শীত এসেছে। এখনই শীত বেশি গায়ে লাগছে। প্রচুর ঠান্ডাও লাগছে। অনেকের অবস্থা ভালো না। গতবারের চেয়ে এবার শীত অনেক বেশি পড়বে বলে মনে হচ্ছে।
কুয়াশা ও ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে কাজ করতে বের হওয়া রোকেয়া আক্তার বলেন, এবার খুব ঠান্ডা করছে। আমাদের মত গরিব লোকদের সাহায্য করা দরকার।
বাংলাদেশ এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মো. জাকির হোসেন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও হওয়ায় শীতের আগমন আগেই ঘটে। শীতের মাত্রা ধীরে ধীরে তীব্র হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা অসহায়, দুস্থ ও বয়স্ক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে সমাজে যারা বিত্তবান ও সামর্থ্যবান রয়েছে, তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (উদ্যান) নঈমুল হুদা সরকার জানান, উত্তর-পশ্চিমের জেলা ঠাকুরগাঁও। ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিন ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এই বার্তায় শীত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।