ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির নেতা মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমি। তিনি হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠান আব্দুর রহিম কাসেমি।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ দুই নেতার বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফরিদপুরে হেফাজতের আরও ১১ নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহিম কাসেমি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের ডাকে যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তা নজিরবিহীন ও অমানবিক। দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকি এবং আমার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সব মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের দেশ ও ইসলামবিরোধী কাজে যোগ না দিতে বাধ্য করি।
তিনি বলেন, আমি হেফাজতে ইসলামের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নই। তাদের সব প্রকার নাশকতামূলক কার্যক্রমকে শরিয়তসম্মতভাবে অবৈধ মনে করি। হেফাজতে ইসলামের সব কার্যক্রম এবং জাতীয় ও জেলা কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করছি। যাদের প্ররোচনায় দেশ ও জনগণের জানমালের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ চলাকালে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও ১০ হেফাজতকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেফতার ব্যক্তিদের নাম জানায়নি পুলিশ।
হেফাজত নেতা খালিদ ও ইহতেশামুল হক রিমান্ডে : হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ দুজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামি হলেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সহ-দফতর সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইহতেশামুল হক সাখী। এদিন নাশকতার মামলায় খালিদ সাইফুল্লাহর ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় করা এক মামলায় ইহতেশামুল হককে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আসামিদের পক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।
ফরিদপুরে হেফাজত নেতা গ্রেফতার : ভাঙ্গা থানায় হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আবুল হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে শহরের পশ্চিম আলীপুরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মাওলানা আবুল হোসাইনের পরিবার থেকে বলা হয়েছে, ভাঙ্গা থানায় হামলার ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তাকে মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
হাটহাজারীতে তদন্তের দায়িত্ব পেল পিবিআই : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের ওপর হামলা, ডাকবাংলো ভাঙচুর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হাটহাজারী মডেল থানার দুটি মামলা তদন্ত করবে পিবিআই চট্টগ্রাম। বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান বলেন, হাটহাজারী থানার ৫১ ও ৫৭ নম্বর মামলা দুটি আমরা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এর মধ্যে একটি সরকারি ডাকবাংলোতে অগ্নিসংযোগ, অপরটি মাদ্রাসার সামনে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ। মামলা দুটির ডকেট বুঝে পেলে তা পর্যালোচনা করে অপরাধীদের খুঁজে বের করব।