চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ান প্রায় ১১০ মাইল দূরে। ১৯৪৯ সাল থেকে তাইওয়ানে স্বাধীন সরকার রয়েছে। কিন্তু চীন তাইওয়ানকে স্বাধীন বলে মনে করে না। চীনের দাবি, তাইওয়ানের ওপর চীনের রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক অধিকার আছে। এ নিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব বহুদিনের। তবে হংকংয়ের মতো তাইওয়ানের ওপর এখনো পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করতে পারেনি চীন।
যদিও চীন মনে করে, প্রয়োজনে তাইওয়ানেও বলপ্রয়োগ করার সুযোগ তাদের আছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোনো দেশ আলাদা করে তাইওয়ানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করলে তা ভালো চোখে দেখে না চীনের সরকার। চীনে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস শুরু হয়েছে। এই কংগ্রেসের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাইওয়ান ইস্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তাইওয়ান, হংকং নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন। দুই অঞ্চলেই ব্যাপক আন্দোলন চলছে। গত শুক্রবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং জানিয়েছেন, কমিউনিস্ট সরকার ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে। তাইওয়ান এবং সংলগ্ন সমুদ্রাঞ্চল যাতে নিরাপদে থাকে, চীন তা নিশ্চিত করবে। তাইওয়ানের উন্নতির জন্য একাধিক প্রকল্পের কথাও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনোভাবেই দেশদ্রোহ বরদাস্ত করা হবে না। চীন প্রশাসন বলছে, আন্দোলন দমন করা হবে এবং একই সঙ্গে তাইওয়ানের উন্নতিতে কাজ করা হবে।
তাইওয়ানের সরকারের তহবিলে গঠিত ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্স (আইএনডিএসআর) এর বিশ্লেষক শু হিয়াও হুয়াং বলেন, গ্রে জোন সংঘাতে অংশগ্রহণকারীরা অংশগ্রহণকারীরা অপ্রচলিত সরঞ্জাম, কৌশল এবং অ-রাষ্ট্রীয় সত্তার ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে যা আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের চেয়ে বেশি হবে না। শত্রুর কার্যক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় কীভাবে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়।
শু বলছেন, অতীতে বেইজিং তাইপের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, অর্থনৈতিক চাপ, অনলাইনে গুজব এবং বিভিন্ন ফার্ম দিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে গ্রে জোন সংঘাত চালিয়ে আসছে। সেটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে এখন। কিন্তু এর মানে এই নয়, সরাসরি যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। তাইওয়ানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্ড্রিউ ইয়াং বলেন, চীন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে ‘ওয়ার অব অ্যাট্রিউশন বা হতাশার যুদ্ধ’ (এর মাধ্যমে নানাভাবে এক জনের শক্তি কমিয়ে দেওয়া হয়) শুরু করেছে। এর মাধ্যমে চীন তাইওয়ানকে রাজনৈতিক, সামরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
গত বছর চেক রিপাবলিকের ৯০ জনের সরকারি প্রতিনিধি দল তাইওয়ান সফর করে যা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় চীন। গত জানুয়ারিতে চীন কড়া বার্তা দিয়ে হুমকি দেয় যে বেইজিং থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য তাইওয়ানের যে কোনো পদক্ষেপ হবে যুদ্ধের শামিল। তাইওয়ানের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজেদের সেনা তত্পরতা বৃদ্ধি এবং যুদ্ধবিমান পাঠানোর কয়েকদিন পর এ ধরনের হুমকি দিয়েছিল চীন।
গত বছর আমেরিকার সঙ্গে তাইওয়ানের অস্ত্র চুক্তি চীনকে আরো চটিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি তাইওয়ানকে এফ ১৬ যুদ্ধবিমানের সেন্সর, মিসাইল, রকেট লঞ্চারসহ একাধিক অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আমেরিকা। এবার তাদের দেওয়া হচ্ছে দুই দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম। এই অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধ জাহাজ, বিমান, সাবমেরিন ধ্বংস করা সম্ভব। অত্যাধুনিক এই অস্ত্র জিপিএসের সাহায্যে চালানো যায়। আমেরিকা বলছে, এই অস্ত্রের সাহায্যে তাইওয়ান তাদের উপকূল রক্ষা করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সমুদ্র অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী। ফলে নিজেদের সুবিধার্থেই তাইওয়ানকে বোয়িংয়ের তৈরি এই অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে রাখে আমেরিকা।
শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানায়, মার্কি নৌ গোয়েন্দা বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বিরাট নৌবাহিনী এখন চীনের। ২০১৫ সালে চীনের ২৫৫টি যুদ্ধ জাহাজ ছিল। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ সেই সংখ্যা ৩৬০ এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ৬০টি বেশি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে এখন চীনের। আগামী চার বছরে চীন ৪০০ যুদ্ধজাহাজের বহর গড়ে তুলতে চায়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনের নৌযুদ্ধের বাহিনীর আকার মাত্র দুই দশকে তিন গুণ বড় হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে চীন।