তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েন শহরের একটি সুরঙ্গের ভেতরে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত চার দশকের মধ্যে ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৬০ জন। শুক্রবার সকালের দিকে প্রায় পাঁচশ যাত্রীকে নিয়ে ট্রেনটি ওই সুরঙ্গের ভেতরে প্রবেশের সময় দুর্ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
তাইওয়ের রেলওয়ে প্রশাসন বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে ৮ বগিবিশিষ্ট ট্রেনটি সুরঙ্গের প্রবেশ মুখে একটি নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ট্রাকে আঘাত হানে। ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। সুরঙ্গের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জীবিতদের উদ্ধারে বেগ পোহাতে হয় উদ্ধারকর্মীদের।
রাজধানী তাইপে থেকে টাইটুং শহরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ট্রেনটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেনটিতে ৪৯০ যাত্রী ছিলেন; যাদের অনেকেই পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। ট্রেনে আসন না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাইওয়ানের ৪০৮ নম্বর এই ট্রেনটি দ্রুতগতির এবং এটিকে সাধারণত নিরাপদ হিসেবে মনে করা হতো। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে ট্রেনটি।
দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনের আঘাতে সুরঙ্গের ভেতরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ট্রেনের বগিগুলো দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এর ফলে ভেতরে ঢুকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও মধ্য-দুপুরের পর আটকা সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
ট্রেনের বগি যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনার সময় একে অপরের ওপর আছড়ে পড়েন। দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা এক নারী যাত্রী স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, এটি ছিল ভয়াবহ। তার পুরো পরিবার ওই ট্রেনে ছিলেন বলে জানান। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দেশটির পরিবহন মন্ত্রী লিন চিয়া-লুং বলেন, ট্রেনটি প্রায় ৪৯০ যাত্রীকে বহন করছিল। এর আগে, দেশটির ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ট্রেনটিতে ৩৫০ যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছিল।
তাইপের স্থানীয় সাংবাদিক ক্যাথেরিন ওয়েই বলেন, তাইওয়ানে সূর্যাস্তের আগে উদ্ধার তৎপরতা শেষ হয়েছে। সুরঙ্গের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের আর কোনো যাত্রী আটকা নেই।
তাইওয়ানে সর্বশেষ এ ধরনের বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর দেশটির পূর্বাঞ্চলের ইলান শহরে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। তার আগে ১৯৯১ সালে মিয়াওলি শহরে দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩০ যাত্রী নিহত এবং শতাধিক আহত হন।