এ সরকারের আমলে বিগত এক যুগে দেশের বিভিন্ন শিল্পখাতে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি ছয় থেকে আটগুণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করার আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল এক হাজার ৬৫০ টাকা, এখন সেটি আট হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। পাটকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল মাত্র ৯৬০ টাকা, এখন সেটি উন্নীত হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ টাকায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এভাবে বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকদের মজুরি ছয় থেকে আট গুণ বেড়েছে।
শ্রমিকদের চিকিৎসা, যাতায়াত, বাড়িভাড়া, গার্মেন্টস শ্রমিকদের দুপুরের টিফিনের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ভাতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিশ্চিত করেছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। রোববার (১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়স্থ বাসভবনে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মোনাফ সিকদার, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন তিনি ভারত থেকে যেন দেশে আসতে না পারেন সেজন্য সব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে তিনি আসবেন। তার এ দৃঢ়চেতা মনোভাব, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক নানা চাপের কারণে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেশে আসতে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ পহেলা মে, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। এ বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নানাবিদ পদক্ষেপের কারণে শ্রমজীবী মানুষের আয়-উন্নতি বাড়া সম্ভবপর হয়েছে।
তিনি বলেন, আশির দশকে স্লোগান হতো শ্রমিকের মজুরি হতে হবে সাড়ে তিন কেজি চালের মূল্যের সমান। অথচ এখন শ্রমিকের মজুরি ১৫ কেজি চালের মূল্যের সমান উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রাম এলাকায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার নিচে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায় না, ঢাকায়ও তা-ই, উত্তরবঙ্গে কিছুটা কম। একজন রিকশাওয়ালা-ভ্যানচালক ভাই আগে যদি একদিন কাজ না করতো চুলাতে আগুন জ্বলতো না। এখন একজন রিকশাওয়ালা ভাই যদি মনে করেন আজকে বাহন চালাবো আগামীকাল চালাবো না, সেটি তার পক্ষে সম্ভব।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ১০ টাকা কেজিতে চাল, বিনামূল্যে চালসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হয়। এগুলো আগে কখনো ছিল না। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন পুরো পৃথিবীতে জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে, ইউরোপে যখন ভোজ্যতেলের দাম ৫০ শতাংশ, খাদ্যপণ্যের দাম ৪০ শতাংশ আর বেড়েছে, সুপার মার্কেটগুলোতে যখন খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, আমাদের দেশে তখন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। অনেকে বক্তৃতা করেন, কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটের দিকে তাকান না। এতো বিশ্ব সংকটের মধ্যেও আমাদের দেশে জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন। পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং, গ্রামে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং। এমনটি আমাদের দেশ কোথায় আছে। এ সফলতা প্রধানমন্ত্রীর নানাবিদ পদক্ষেপের কারণে হয়েছে।
ক্ষমতায় এলে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে বিএনপি, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ড. হাছান বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন শ্রমিকরা অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হতো। আদমজীর শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করেছে তখন বিএনপি কী করেছে আপনারা জানেন। কৃষি শ্রমিকরা যখন সার ও কৃষি উপকরণের জন্য আন্দোলন করেছে তখন তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রা অনেক নির্বিঘ্ন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সব ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই এ বছর মহাসড়ক, রেল ও নৌপথে স্বস্তির ঈদযাত্রা হচ্ছে।