গতকাল শনিবার(১৯ নভেম্বর) সিলেটে আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত ও শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও হত্যা বন্ধ করতে হবে। এটাই এখন সংকট সমাধানের পথ। সরকারের হুমকিধমকিতে আর কাজ হবে না।
সিলেট মহানগরের সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এ গণসমাবেশে ফখরুল ২৬ মিনিটের বক্তব্যে সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। শাহজালাল (রা.) যেভাবে যুদ্ধ করে সিলেটে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন সেভাবে আপনাদের সিলেট থেকেই ভোটাধিকারের নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসান জীবন, কলিম উদ্দিন মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।
অন্যান্য সমাবেশের মতোই মঞ্চে বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে একটা চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল। সমাবেশ বেলা ২টায় শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় সাড়ে ১১ টায়। এ প্রসঙ্গে আয়োজকরা বলেন, যেহেতু নেতাকর্মীরা দূরদূরান্ত থেকে ধর্মঘটের কারণে পায়ে হেঁটে খেয়ে না খেয়ে সমাবেশে এসেছেন, তাই তাদের সুবিধার জন্য আগেই সমাবেশ শুরু করা হয়। সমাবেশে সিলেট বিভাগ ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল, নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ থেকে লোকজন যোগ দেয়। বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ঢাকা থেকে ৫০টি গাড়ির বহর নিয়ে দুপুরে সিলেট পৌঁছেন। আলিয়া মাঠের চার দিকে ছিল জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনে ছাওয়া।
এ ছাড়া গোটা সিলেট শহরে বিএনপির প্রবাসী নেতাদের বড় বড় ব্যানার ও পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে যুক্তরাস্ট্রের ফ্লোরিডা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল এই বিশাল গণসমাবেশে অংশ নেন। কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজুর সৌজন্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মো. কামাল উদ্দিন, সৌদি আরব প্রবাসী নেতা টিপু সুলতানসহ বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবাসী নেতারা তাদের অনুসারীদের দিয়ে শোডাউন করেন। আলিয়া মাদরাসা মাঠের আশপাশের চৌহাট্টা, দরগাহ গেট, রিকাবি বাজার, সুবিদবাজার, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সমাবেশ ঘিরে শহর জুড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতি রাজনীতি সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ কিন্তু শান্তিতে নেই। তেল, চিনি শাক-সবজি ও ডিমের দাম আবার বেড়েছে। অথচ সরকার বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। কিন্তু সেটা এখন ৮০ টাকা। আজকে ৩ কোটি তরুণ বেকার। তাদের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। তারা দেশকে আবারও তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। ‘বিএনপিকে হেফাজতে ইসলামের মতো দমন করা হবে’ সরকারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, কথা পরিষ্কার- এইবার মানুষ জেগে উঠেছে। ধমকি দিয়ে কাজ হবে না। মানুষ বিজয় না নিয়ে ঘরে ফিরবে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু খেলার ডাক দেয়। তারা তো দরজা বন্ধ করে খেলায় পারদর্শী। যে কারণে পাপিয়ারা ধরা পড়লে ওবায়দুল কাদের আর দলের নেতাদের বুক ধড়ফড় করে। আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এ গণসাবেশ সিলেটের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এক সমাবেশ। গণসমাবেশ একদিনের থাকলেও তিন দিন ধরেই সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ এ মাঠের দখল নিয়ে আছেন। এ গণসমাবেশ প্রমাণ করে সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই।