বিএনপিকে সংলাপে আনতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ওই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা মনে করি সংকট একটাই, সেই সংকট হচ্ছে কিভাবে নির্বাচন হবে, কোন ব্যবস্থায় হবে। নির্বাচন অবশ্যই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা হলে সেই বিষয়ে হবে। অন্য কোনো বিষয়ে কথা হবে না।
সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপিঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের শপথে মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
গত বছরের শুরুতে হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করে। তবে বিএনপি এবং এর মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো কোনো সংলাপে অংশ নেয়নি। বিএনপিকে না পাওয়ার পর সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, তারা সংলাপ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এই দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েই যাবেন।
বিএনপি এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এর বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে ইসির সঙ্গে সংলাপে যেতে নারাজ তারা। ইসি বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা ঠিক করার এখতিয়ার তাদের নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, নির্দলীয় সরকার ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ নেই। এমন অবস্থার মধ্যে ২৩ মার্চ বিএনপিকে সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য ইসির পক্ষ থেকে ফের চিঠি দেওয়া হয়।
সোমবার ইসির চিঠির বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আবার নাটক করে। আমরা যদিও ওই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু এ ধরনের বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও ভুল বুঝানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা মনে করি সংকট একটাই, সেই সংকট হচ্ছে কিভাবে নির্বাচন হবে, কোন ব্যবস্থায় হবে। নির্বাচন অবশ্যই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা হলে সেই বিষয়ে হবে। অন্য কোনো বিষয়ে কথা হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলছি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন সরকার নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।
পাকিস্তানের মতো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশকে শোষণ করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ৭১ সালের পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এবং পাকিস্তান শাসকের প্রেতাত্মার বাংলাদেশ। পাকিস্তান যেভাবে শাসন, শোষণ করেছে একইভাবে আজ আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করছে। বাংলাদেশের মানুষকে ভয়ঙ্করভাবে শাসন করছে নির্যাতন নিপীড়ন করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি; আমরা চেয়েছিলাম একটি সার্বভৌম গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। আমাদের স্বপ্ন দেখেয়েছিল পূর্বপুরুষেরা- একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, যেখানে সমস্ত মানুষ সাম্যের মধ্যে বাস করবে, ন্যায়বিচারের মধ্যে বাস করবে, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে, কল্যাণের মধ্যে বাস করবে। দুর্ভাগ্য ৫২ বছর পরেও বলতে হচ্ছে যেই বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সেই বাংলাদেশ আমরা পাইনি।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করে তারা একাই দেশটা স্বাধীন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যুদ্ধ করে নাই। আজকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, জাতিকে রক্ষা করার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। দেশ, জাতি, গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করছেন, তার জন্য আমাদেরও কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
বিএনপির ৩৫ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন শতকরা ৮০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। কেউ বাকি নেই, মিথ্যা মামলা, অত্যাচার, গুম, খুন এসবের মধ্য দিয়ে এই সরকার জোর করে ক্ষমতাটাকে ধরে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা চেতনা- সত্যিকার অর্থে সাম্য মানবিক মূল্যবোধের একটি কল্যাণমূলক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, ৩৫ লক্ষ নেতা কর্মীদের যে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে মুক্তিযোদ্ধারা শপথ নিয়েছে, নতুন প্রজন্ম শপথ নিয়েছে এই সরকারকে অপসারণ না করে তারা ঘরে ফিরে যাবে না’।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মো. মজিবর রহমান সরোয়ার, সংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।