অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য বিখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে অদ্ভুত সব নিয়মের বেড়াজালে বন্দি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলো। এর মধ্যে একটি হলো, বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবেন না। তবে বিশেষ বিবেচনায় চলমান সেশনে থাকতে পারেন তারা। ছেলেদের হলে এসব নিয়মের কোনো বালাই নেই। ঢাবির ১৮টি হলের মধ্যে ছাত্রী হল পাঁচটি। এতে ওঠার সময় ছাত্রীদের ২৭টি ধারা সংবলিত একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এর মধ্যে একটি ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল করা হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’
ছাত্র হলে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। নেই কোনো অঙ্গীকারনামা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও কোনো হলের জন্য এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। ছাত্র হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রদের শুধু নাম-ঠিকানা নেওয়া হয়। সেটা সঠিক কিনা- সে বিষয়ে অঙ্গীকারনামা দিতে হয়। সম্প্রতি ঢাবির বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল এবং শামসুন নাহার হলের দুই ছাত্রীর সিট বরাদ্দ নিয়ে এ আলোচনা শুরু হয়েছে। বিবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল কর্তৃপক্ষ এক ছাত্রীর সিট বাতিল করে দেয়। শামসুন নাহার হলে ছাত্রীর বড় বোন বিবাহিত হওয়ায় ও হলে অবস্থান করায় ছোট বোনকে সিট দেওয়া হচ্ছে না। এক পর্যায়ে একই হলে থাকা ওই ছাত্রীর বিবাহিত বড় বোন সিট ছেড়ে দিলেই শুধু তিনি সিটে উঠতে পারবেন বলে শর্ত দেওয়া হয়। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই গত ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমা খাতুন ভাসানী হলে বিবাহিত ছাত্রীদের আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সিট ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন।
এসব নিয়মকে ‘অদ্ভুত ও আদিকালের’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঢাবির ছাত্রীরা। এসব নিয়ম বাতিলসহ চার দাবিতে গত ১৩ ডিসেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত আবেদন জানায় ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল। দাবিগুলো হলো- বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার ওপর প্রচলিত বিধি-নিষেধ বাতিল; ছাত্রী হলে ‘স্থানীয় অভিভাবক’ শব্দের পরিবর্তে ‘জরুরি যোগাযোগ’ প্রবর্তন; আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে হয়রানি বন্ধ; হয়রানি করলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহালসহ জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে থাকতে দেওয়া।
এ বিষয়ে ওই প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি সমকালকে বলেন, হলের অঙ্গীকারনামায় যে নিয়মাবলি রয়েছে, তা টাইপ রাইটারে লেখা। অর্থাৎ এই নিয়মগুলো কত পুরোনো, তা শিক্ষকরাও বলতে পারেন না। আবার একেক হলে একেক রকম নিয়ম। যেমন শামসুন নাহার হলে বিশেষ বিবেচনায় চলমান সেশনে বিবাহিত শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন বলা হলেও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের নিয়মে বিবাহিত হলে কোনো অবস্থাতেই হলে থাকতে পারবেন না। একেক হলে একেক রকম বৈষম্য। ছেলেদের হলে প্রশাসনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এত হয়রানির শিকার হয় না। তিনি বলেন, একজন ছাত্রী বিয়ে করবেন কিনা- তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রশাসন কেন কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে? বিয়ে করা তো আর অপরাধ না।
এ বিষয়ে কথা বলতে শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ ড. লাফিফা জামালকে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ্য অধ্যাপক নাজমুন নাহারকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা মূল্যবোধ ও সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়মগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেখানে অনেক ভালো নিয়মও আছে। তবে বর্তমান সময়ে তা যৌক্তিক কিনা, সেটা পর্যালোচনার দাবি রাখে। শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদন পেয়েছি। দাবিটি নিয়ে সংশ্নিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব আমরা। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এ বিষয়ে আলাপ করতে হবে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে।’