পৃথিবীর শহরগুলোতে তাপমাত্রা চরমভাবে বাড়ছে। অতিরিক্ত উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় ঢাকা রয়েছে সবার শীর্ষে। গবেষণায় দেখা গেছে, চরম উষ্ণতার কারণে মানুষের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়ছে, যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। বাংলাদেশ চরম তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির তালিকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে ভারতের পরই রয়েছে।
প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ঢাকা প্রসঙ্গে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালে এই শহরে জনসংখ্যা ৪০ লাখ থাকলেও এখন দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বিবিসিকে বলছেন, তাপমাত্রা বেশি হলে মানুষ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ক্লান্ত হলে তো স্বাভাবিকভাবেই তার কাজের ক্ষমতা কমে যায়। ঢাকার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক মানুষ বসবাসের কারণে যানজটের তৈরি হয়, সেটাও মানুষের গতি ও ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, চরম উষ্ণতার কারণে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চারভাগের একভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গবেষকরা একটি প্যাটার্ন দেখতে পেয়েছেন যে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার শহর এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র মানুষরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছু পান না।
১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ধরে গবেষকরা বিশ্বের ১৩ হাজার শহরে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেসব শহরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকে, তাকেই তারা চরম তাপমাত্রা হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। এরপর অন্য শহরগুলোর বাসিন্দাদের তথ্যের সঙ্গে সেগুলো তুলনা করে দেখেছেন।
গবেষক দলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ ইউনিভার্সিটির আর্থ ইন্সটিটিউটের গবেষক ক্যাসকেড টুহলস্কি বলেছেন, চরম উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের কর্মক্ষমতার ওপর, ফলে তাদের আয়-রোজগারও কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হচ্ছে।
ঢাকার পরেই ক্ষতির তালিকায় রয়েছে ভারতের দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর। রয়েছে চীনের সাংহাই, গুয়াংজু, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই। এসব শহরে গত ৩২ বছরে উষ্ণতা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব ৩৭ শতাংশ, বাকি ৬৩ শতাংশের পেছনে স্থানীয় কারণ রয়েছে। অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বলছেন, এসব সমস্যার সমাধানে সবুজায়নের পাশাপাশি গাড়ি চলাচল সীমিত করতে হবে। কারণ শহরে তাপমাত্রার পেছনে গাড়ি বা যানবাহনের বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই সঙ্গে এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে মানুষ শুধুমাত্র বড় শহরমুখী না হন। বিবিসি বাংলা।
