ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ রেখে মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করার অভিযোগ উঠেছে কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ও উত্তর ছাত্রাবাসের সহকারী হল সুপার সালাউদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে অনুষ্ঠানে করার জন্য দুপুর ও রাতের খাবার বন্ধ রাখেন তিনি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর ছাত্রাবাসে ইন্টারমিডিয়েট, অনার্স ও মাস্টার্সের প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষার্থীরা দুপুর ও রাতের খাবার কলেজের অন্য ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে ও হোটেলে খান। কেউ কেউ বাহিরে শুধু একবেলা খেয়ে থেকেছেন। কারণ, বাহিরে খেতে অনেক টাকা গুণতে হয়। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব ও অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা। হলের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন, পার্টটাইম জব ইত্যাদি করে পড়াশোনার খরচ চালান। এদের প্রায় সবাই চাইলেই বাড়তি কোনো টাকা খরচ করতে পারেন না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজ উত্তর ছাত্রাবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, সহকারী হল সুপারের মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করার জন্য ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে অনেক কষ্ট হয়েছে। দুপুরের খাবার অন্যত্র খেতে গিয়ে অনেক বেশি খরচ হয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে হলে থাকি। হলে তিন বেলার মধ্যে দুইবেলা খাবার দেওয়া হয়। সকালে খাবার তৈরি হয় না বলে নাস্তা না খেয়েই থাকি। সহকারী হল প্রভোস্টের মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করার জন্য ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাতের খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে। হলের খাবার বন্ধ থাকায় দুপুরে বাহিরে খেয়েছি। রাতে টাকার সংকটে খেতে পারিনি। কারণ, হোটেলে এক বেলা খেতে ডাইনিংয়ের দুই বেলার বেশি খরচ হয়েছে।
ছাত্রাবাসের আরও এক শিক্ষার্থী বলেন, নোটিশ ছাড়া ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদেরকে জানানোও হয়নি। এজন্য অন্য ছাত্রাবাসেও খাবার পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। খাবার সংকটে কেউ কেউ খেতে পারেনি। বাধ্য হয়ে অনেককে হোটেলে খেতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের খাবারের কষ্ট দিয়ে ডাইনিংয়ে কেন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে করা হলো। হলে সাধারণত ধনীলোকের ছেলেরা থাকেন না। সবাই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব ও অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাদেরকে এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নি। এর দায় হল ও কলেজ প্রশাসন কোনোভাবে এড়াতে পারে না। ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধ থাকায় অনেকে শিক্ষার্থী রাতে না খেয়েও থেকেছে।’
এসব জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক সালাউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যেকোনো অনুষ্ঠান করা হয়। ছাত্রদেরকে জানানো হয়েছে এবং তাদের অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলেন।’
শিক্ষার্থীদের খাবার বন্ধ রেখে ডাইনিংয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে পারে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা কলেজ উত্তর ছাত্রাবাসের হল প্রভোস্ট ওবায়দুল করিম বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, উনি (সালাউদ্দিন হায়দার) ছাত্রদের অনুমতি নিয়েছে। রুমে রুমে আগে ছাত্রদের বলা হয়েছে। ছাত্ররাও আমাকে বলছে, তাদের সবার সাথে উনি কথা বলেছে।’
শিক্ষার্থীরা এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুমতি বলতে কী? এখানে সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান হয়। আর এইটা, এখানে স্যারও সহকারী হল প্রভোস্ট হিসেবে আছে। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক আসলে পরিবারের মতোই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি ওইভাবে নিয়েছে। আর আমি জানতাম, এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদের সম্মতি আছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘রোববার অফিস খোলা হলে বিষয়টি আমি দেখব যে কেন এবং কি কারণে এরকম হলো।’