রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে গত ১ আগস্ট সমাবেশ কর্মসূচির অনুমতি না পেয়ে আজ ৪ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু আজকের সমাবেশেও অনুমতি না পাওয়ায় আগামী ৬ আগস্ট বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে আজ ৪ আগস্ট, জুমাবার, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তারকৃত সব নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।’
‘জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গত ১ আগস্ট রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা করেছিলেন। ওইদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। সমাবেশের বিষয়ে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ইমেইলে এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে চিঠি দিয়ে আসেন। তবে প্রশাসন সহযোগিতা না করায় এবং ১ আগস্ট কর্ম দিবস হওয়ায় সমাবেশের কর্মসূচিটি বন্ধের দিন অর্থাৎ আজ ৪ আগস্ট, জুমাবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্ধারণ করা হয়। ফলে আবারও ডিএমপি কমিশনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সে বিষয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু গতকাল বিকেলে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সমাবেশ কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
‘সভা-সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃতি অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু প্রশাসন বারবার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আমরা তীব্র ভাষায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের আচরণ অগণতান্ত্রিক, অন্যায় ও অনৈতিক। আমাদের সঙ্গে বারবার অন্যায় করা হচ্ছে।’
‘দেশের সংবিধান বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সরকারি দল যখন তখন অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করবে, আর আমাদের বেলায় অনুমতি লাগবে? এ দ্বৈত নীতি কেন?’
‘জামায়াত আইনের দৃষ্টিতে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াতকে সে সুযোগ না দিয়ে সারা দেশে জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতের আট শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদের নাজেহাল করছে। কোনো কোনো এলাকায় পুরুষ নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনি ও মানবাধিকার পরিপন্থি।’
‘সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত সরকার দমন, পীড়ন, গ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যেনতেনভাবে আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।’
আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। প্রশাসন সহযোগিতার পরিবর্তে একটি সংঘাতমুখর পরিবেশের অবতারণা করেছে। তাই আমরা আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করছি।’
‘এর প্রতিবাদে রোববার (৬ আগস্ট) সব বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
‘জনগণের দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমরা আবারও প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে এবং নিরপেক্ষভাবে তাদের প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আ. রহমান মুসা, নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন।