‘এখন কী বুলবো বুলেন (বলেন), ‘রোডে পুলিশের যে ঝামিলা (সমস্যা)। এখন এইভাবে গাড়ি চালাতে হবে। দেখেন আমরা তো পেটের দায়ে কর্ম (কাজ) করি। আমার এ রকম সুমায়ও (সময়) নাই যে আমি য্যা য্যা (গিয়ে গিয়ে) (বিআরটিএ অফিসে) ঝামিলা (সমস্যা) করব। মহাজনের গাড়ি চালাই। তারাও কার্ড ছ্যাড়া (ছাড়া) গাড়ি দিতে চ্যাচ্ছে (চাচ্ছে) না। এখন কী করবো বুলেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের রিসিভ কপির সিলপ দি (দিয়ে) ট্রাক চালাতে হবে। কি করবো কন, হয়রানি হয়্যা হয়্যা পানু (পেলাম), এখন লাস্টে অ্যাসা দেখিচ্ছি যে লাইসেন্সের ডেটিই (মেয়াদ) নাই।’
বুধবার (১ মার্চ) এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শাহ এন্টারপ্রাইজের মাছবাহী ট্রাকের চালক নাহিদ হোসাইন সবুজ (৩০)। সবুজের বাড়ি পুঠিয়ার তাহেরপুরের মাস্টারপাড়ায়। পাঁচ দফা ঘুরে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়ে দেখেন ছয় বছর আগেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) রাজশাহী কার্যালয়ে। এমতাবস্থায় লাইসেন্সটি নিয়ে আরেক দফা কার্ড প্রাপ্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নাহিদ হোসাইন সবুজ।
সবুজের লাইসেন্স কার্ডে দেখা গেছে, ২০২১ সালে লাইসেন্সের জন্য সবুজ আবেদন করেছিলেন রাজশাহী বিআরটিএ অফিসে। আর কার্ডে লাইসেন্স দেওয়ার তারিখ আছে ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর। মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখে আছে ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর। সবুজের আবেদনের ১০ বছর আগেই লাইসেন্স তৈরি হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে- বিষয়টি কোনোভাবে ভুল হয়েছে। সংশোধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সবুজ জানান, তিনি ২০২১ সালে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন রাজশাহী বিআরটিএ কার্যালয়ে। এই লাইসেন্স পেতে তাকে পাঁচ দফা ডেলিভারি কাগজের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হয়েছে এই অফিসে এসে। দীর্ঘদিন ঘুরেও লাইসেন্স হাতে পাননি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগেই। লাইসেন্স কার্ড না থাকায় সড়কে পুলিশের জেরার মুখে পাড়তে হয়েছে তাকে। লাইসেন্স কার্ড ডেলিভারির সময় দিয়েছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। তারা আমার কার্ডের ছবি মোবাইলে তুলে নিয়ে ই-মেইলে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। তারা বলেছেন- কিছু দিন পরে খোঁজ নিয়েন। এবার তারা ১০ মাস সময় বাড়িয়েছে। তবে লাইসেন্স পাব কিনা জানি না। তারা বলেছেন- আপনি খোঁজ নিয়েন, লাইসেন্স সংশোধন করে কার্ড তৈরি হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়রানি হতে হয়েছে লাইসেন্স কার্ডের জন্য। তারা দুই-তিন মাস করে ডেট (তারিখ) বাড়িয়ে দিত। দুই-তিন মাস পর পরে বিআরটিএ অফিসে যেতে হতো। তারা জানায়- কার্ড এখনো আসেনি। পরে কার্ড হাতে পেলাম তাও আবার ডেট (মেয়াদ) নাই।
লাইসেন্স করতে কত টাকা খরচ হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিসাব করিনি। তাও ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পার হয়ে যাবে। আই টেস্ট, ড্রপ টেস্ট। যে জায়গায় যাই সেই জায়গায় তো টাকা ছাড়া কথা বলে না। বিআরটিএতে পরিচিত কয়েকজন আছে, তারা যেভাবে বলে সেই ভাবে কাজ করি। আই টেস্ট, ড্রপ টেস্টে ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) মো. আব্দুল খালেক বলেন, এটা তো বিআরটিএ’র ভুল না। যে প্রতিষ্ঠানে কাজগুলো হয়েছে, সেখানে ভুল হয়েছে। আমরা স্বীকার করছি ভুল হয়েছে। আমি (কর্মকর্তা) ছুটিতে আছি। তাকে (সবুজ) বলেছি, দুই দিন পর অফিসে আসতে। তারপরে আবেদন লিখে পাঠিয়ে দেব। কার্ডটি ঠিক হয়ে যাবে।