চলতি বর্ষায় বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপালেও দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। ‘হিমালয় কন্যা’ নামে পরিচিত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির প্রায় সব জেলাতেই মশাবাহিত এই রোগটি হানা দিয়েছে।
নেপালের মহামারি ও রোগ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা উত্তম কৈরালা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছর বর্ষায় নেপালের ৭৭টি জেলার ৭৫টিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ২শ’রও বেশি রোগী এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের।
তবে কৈরেলা আরও বলেছেন, আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করছেন তারা।
২০০৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় নেপালে। তারপর থেকে প্রতি বছরই বর্ষাকালে এ রোগে আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী এই দেশটিতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল ২০২২ সালে। ওই বছর ৫৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন মশাবাহিত এই রোগটিতে এবং মারা গিয়েছিলেন ৮৮ জন।
তবে নেপালের জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা নেপাল হেলথ রিসার্চ কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মেঘনাথ ধিমাল জানিয়েছেন, চলতি বর্ষায়ে যে হারে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে দেশটিতে— তাতে গত বছরের রেকর্ড পেরিয়ে যেতে পারে দেশটি।
মেঘনাথ ধিমালের মতে, নেপালে ডেঙ্গুর বিস্তারের প্রধান কারণ আবহাওয়াগত পরিবর্তন। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের এই দেশটিতে সাধারণত শরৎকাল থেকেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে এবং শীত পড়া শুরু করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও বৃষ্টিবহুল শরৎ দেখছে নেপাল।
ফলে বর্ষা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ডেঙ্গুর একমাত্র পরিবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের পরিবেশ বজায় থাকছে; আর এই ব্যাপারটিকেই নেপালে ডেঙ্গুর বিস্তারের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন মেঘনাথ।
নেপালের যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেসবের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় পাবর্ত্য শহর ধারান অন্যতম। শহরটিতে অত্যন্ত দ্রুতহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা। শহরটির হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছে ডেঙ্গু রোগীতে। এমনকি রোগীর অতিমাত্রায় চাপ থাকায় সহজে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলে জানিয়েছেন শহরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উমেশ মেহতা।
তিনি আরও জানান, ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অধ্যুষিত ধারানে গত আগস্টে একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে কখনও এমন ঘটেনি।
ধারানের বাসিন্দা অমৃত কুমার ঠাকুরের পরিবারে ৪ জন সদস্যের সবাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন গত মাসে। ২৭ বছর বয়সী এই তরুণ জানিয়েছেন, শুরুর দিকে জ্বর ও মাঝারি মাত্রার গা ব্যাথা থাকলেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে এখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই সেরে উঠেছেন।
‘আমার জীবনে অসুস্থতা সংক্রান্ত সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার নাম ডেঙ্গু,’ রয়টার্সকে বলেন অমৃত।