এবারও অসময়ে ভয়ংকর রূপ নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই চার মাস ভাইরাসটির প্রভাব থাকে। কিন্তু সেই ধারা এখন পাল্টে গেছে। গত কয়েক বছর ধরেই বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, বাড়ছে মৃত্যু।
চলতি বছর এ রোগে সবচেয়ে বেশি ৮৬ জনের মৃত্যু হয় গত অক্টোবরে, যা গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। কিন্তু সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে চলতি নভেম্বরের ২০ দিনেই। এ মাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জনের। আর আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৮৩ জন। অক্টোবরে ২১ হাজার ৯৩২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এবার এই ভাইরাস ছড়িয়েছে দেশের সব জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এর পরের কয়েক বছর জুন-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অনেকটা সীমাবদ্ধ ছিল এই রোগের বিস্তার। কিন্তু গত ২০ বছরের মধ্যে অসময়ে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা যায় ২০১৯ সালে। ওই বছর নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ১১ জন। আর মৃত্যু হয় ২ জনের। এর পরের বছর অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। ওই বছর নভেম্বরে আক্রান্ত হন ৫৪৬ জন। আর মৃত্যু হয় তিনজনের। ২০২১ সালে আবারও বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ওই বছরের নভেম্বরে আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৫৬৭ জন। মৃত্যু হয় ৭ জনের।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এ বছর সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কম থাকায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হচ্ছে। রোগটি এখন আর মৌসুমি বা শহর এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারাবছরই দেখা যাবে এই ভাইরাসের রোগী। তাই ডেঙ্গু নিধন ও সচেতনতা কার্যক্রম বছরজুড়েই রাখতে হবে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন সমকালকে বলেন, সিটি করপোরেশনে এলাকাভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবা না থাকায় ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। অন্যান্য দেশে এই রোগীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর সবক’টি ধরনই এখন সক্রিয়। আবার একাধিক ধরনেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। আক্রান্ত ব্যক্তি দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩০ জনে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৪৬ রোগী। এ বছর দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৮০৫ জনে। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ৩৪ হাজার ৭১ জন। আর ঢাকার বাইরে ১৮ হাজার ৭৩৬ জন। এর আগে কোনো বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২০০ ছাড়ায়নি। এ বছর মৃতদের ৩৩ শতাংশই শিশু।
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, কোনো রোগের প্রকোপ একবার বেড়ে গেলে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে না। এবার মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ রোগীরা হাসপাতালে দেরিতে আসছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় মশা বাড়ছে, আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।