মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। রোববার (৬ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি অন্য একটি নৌযানের সহায়তা (ভাসমান কেন) টেনে তোলা হয়।
এতে নিখোঁজ স্বজনদের মনে দেখা দিয়েছে হতাশা। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ পাঁচজন নিখোঁজের কথা বললেও নতুন করে কারো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তিন নারীসহ দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ দুই শিশুর দাদা সিরাজদিখান উপজেলার কয়রাখোলা এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
নুরুল ইসলাম বলেন, গতকালের ট্রলারডুবির ঘটনায় আমার এক নাতি তুরান (৮) ও নাতনি নাভা (৫) নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বাবা আরিফ হোসেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। শিশুরা মা সমাপ্তির সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল। ওই দুই শিশু সাঁতার জানতো না। ট্রলারডুবির পর মা সমাপ্তি সাতরিয়ে উঠলেও নিখোঁজ রয়েছে তার দুই শিশু।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক ওবায়দুল করিম খান জানান, বৃষ্টি ও স্রোতে ট্রলারটি উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছিল।স্থানীয়দের সহযোগিতায় নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা ট্রলারটির উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া স্থান থেকে এয়ার লিফন্টিং ব্যাগ, ক্রেন বোটের সাহায্যে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রলারটি থেকে কয়েকটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে, তবে কারো মরদেহ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, স্বজনদের দাবি ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো পাঁচজন নিখোঁজ। তাদের মধ্যে দুজন শিশু ও তিনজন নারী রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় মৃত আটজনের মধ্যে দুজন নারী, দুটি শিশু রয়েছে।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মারা যাওয়া আটজন হলেন, মোকছেদা বেগম (৪০), হ্যাপি আক্তার (২৮), পপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০), সজিবুল (৪)। হুমায়রা (৫ মাস), ফারিয়ান (৮) ও রাকিবুল (১২)। তাদের সবার বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানান, দুপুরের পর লতাব্দি ইউনিয়নের নারী-শিশুসহ ৪৬ ব্যক্তি ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে পিকনিকে যান। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত ৮টার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে ডুবরিরা। গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।