নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে মুনিরুল ইসলাম (২৫) নামে এক মুফতিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচকাটা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
তবে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য না থাকলেও এ ঘটনায় স্পর্শকাতর কিছু থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।
মুফতি মুনিরুল ইসলাম পাঁচকাটা গ্রামের মো. জাকির হোসেনের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুনিরুল ফেনী জেলায় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি পাশ করেন। পরে টঙ্গী এলাকায় একটি মাদরাসায় বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। এরপর রাজধানীতেই অধিকার নামে একটি পত্রিকা অফিসে বছর খানেক চাকরি করেছেন। চাকরি ছেড়ে গত এক বছর ধরে গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করত। বাড়িতে থাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট কোনো কাজ করতেন না তিনি। তবে মাঝে মধ্যে এলাকায় বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল করতেন। এছাড়া রাসায়নিক সার নিয়ে গবেষণা করতেন।
মুনিরুলের বাবা জাকিরুল পাঁচকাটা বাজারে চায়ের দোকান চালান। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মনিরুল সবার বড়। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য দুই ছেলে ঢাকার শনির আখড়ায় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে।
মুনিরুলের বাবা জাকির হোসেন জানান, ভোরে সাদা পোশাকে চারজন লোক এসে ঘরের দরজায় নক করে। দরজা খুললে তারা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয় দেয়। ঘরে ঢুকে মুনিরুলকে ধরে বাইরে থাকা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসের কাছে নিয়ে যায়। তারা জানায় মুনিরুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। তথ্য জেনেই ছেড়ে দেবে। তবে মুনিরুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এটা তারা জানায়নি। এসময় তারা মনিরুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটাও নিয়ে যায় তারা।
তিনি আরও জানান, মুনিরুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই চারজন তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়েছে। তাদের হাতে পিস্তল ছিল, হ্যান্ডকাপ ছিল। বুধবার বিকেল থেকে তারা বাড়ির আশপাশে ও বাজারে ঘুরেছেন। সবাই তাদের দেখেছে, আমিও দেখেছি। তখন তো বিষয়টি কেউ বুঝতে পারেনি।
তিনি বলেন, সকালে স্থানীয় মেম্বারকে নিয়ে থানায় গেলাম। ওসি সাহেব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মোহনগঞ্জ চলে গেছেন। সেকেন্ড অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানালেন। তিনি সার্চ দিয়ে দেখলেন মুনিরুলের নামে কোনো মামলা নেই। সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলাম। পুলিশ বলল ২৪ ঘণ্টা পরে করতে হবে। এই সময় বিভিন্ন জায়গায় মুনিরুলকে খুঁজতে বললেন।
জাকির হোসেন বলেন, শুক্রবার সারাদিন বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে নানা জায়গায় খুঁজলাম। কোথাও তার সন্ধান পেলাম না।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মুনিরুলের বাবা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বাড়িতে রান্না-খাওয়া সব বন্ধ। পরিবারের সবাই আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে বলেও জানান তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, যেখানেই নেওয়া হোক সেই খবরটা আমাদের জানানো হোক। আমার ছেলে বেঁচে আছে এটা জেনে শঙ্কামুক্ত হতে চাই।
নাজিরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সমর আলী জানান, সকালে ঘটনা শুনে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়। পরে মুনিরুলের বাবা জাকির হোসেনকে নিয়ে থানায় গেলাম। থানা পুলিশ এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলল। ওই পরিবারের সবাই আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম (পিপিএম) বলেন, মুনিরুলকে কারা নিয়ে গেছে এটা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে গেলে তো অবশ্যই পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। আমরা খোঁজ করে দেখব। পরিবারের লোকজনও খু্ঁজে দেখুক।
এ বিষয়য়ে জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই তাই কিছু বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখি কি হয়েছে।