ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানব সভ্যতা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। চতুর্থ নয় পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, একাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রযুক্তিবিদদের সমন্বিত উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকায় হোটেল রেডিসনে মঙ্গলবার এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া প্যাসিফিক (এইউএপি) আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশ্বের শিক্ষানেতাদের লাগসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলে। সেটি একটি যান্ত্রিক বিপ্লব। তাদের মানুষ নাই তাই যন্ত্র দিয়ে মানুষের অভাব পূরণ করতে চায়। আমরা যন্ত্র চাই তবে মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। আমরা তাই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের পথে হাঁটছি। ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যুগে তথ্য-প্রযুক্তি এবং গুণগত শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিশ্বের ১০টি দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
এইউএপি-এর সভাপতি ড. পিটার লি লওরেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে ভারতের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স এর প্রতিষ্ঠাতা ও ভারতীয় লোকসভার সদস্য প্রফেসর ড. অচ্যুৎ সামন্ত, এসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া প্যাসিফিক (এইউএপি) এর প্রথম সহ-সভাপতি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, এসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া প্যাসিফিক (এইউএপি) এর মহাসচিব প্রফেসর ড. রিকার্ডো পি পামা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েসন অব ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টস ড. ফার্নান্দো লিয়েন গ্রেসিয়া।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আগামীদিনের পৃথিবীর জন্য উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশ্বের শিক্ষানেতাদের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি তুলনাহীন। তাদেরকে যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজতর হবে।
মন্ত্রী ২০১৬ সালে প্রকাশিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণাটিকে যান্ত্রিক উল্লেখ করে বলেন, ড্রাইভারবিহীন গাড়ি আর কর্মী ছাড়া গার্মেন্টস পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য আবশ্যক মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের জন্য হবে অমানবিক। ২০১৮ সালের পর পঞ্চম শিল্পবিপ্লব ধারণাটি বিশ্বে সমাদৃত হয়ে উঠেছে। যেখানে জাপানের সোসাইটি ফাইভ পয়েন্ট জিরো যন্ত্র ও মানুষের সমন্বয়ে সমন্বিত হওয়ায় সেটা মানবিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ধারণাটি প্রকাশের আট বছর আগে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোভিডকালে প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ করেছে। ডিজিটাল কর্মসূচি এই সময় মানুষের অচল জীবনযাত্রা সচল রাখে।
এইউএপি-এর লক্ষ্য হলো সংস্থাটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক ও কার্যকরী মঞ্চ তৈরি করা। মহামারি পরবর্তী সময়ে ঢাকায় আয়োজিত এই ১৫তম সম্মেলনে শিক্ষানেতারা তথ্য-প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আলোচনা করছেন। এছাড়া করোনা পরবর্তীতে কর্মসংস্থানের জন্য অনলাইন থেকে মিশ্র শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভাবন, কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ভর শিক্ষার জন্য পরীক্ষামূলক ও ব্যবহারিক শিক্ষার প্রচলন, প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদান, উদ্ভাবন-ইনকিউবেশন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গতিশীলতা এবং অনুষদের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রয়োজন বলে আলোচকরা উল্লেখ করেন। পরে মন্ত্রী ডিজিটাল মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।