বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রায় অর্জিত সাফল্য দেশকে নিয়ে গেছে সত্যিকার সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে। স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের সফলতা ও অর্জনগুলোকে এভাবেই বিশ্লেষণ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মতে, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের সূত্রপাত স্বাধীনতার পর থেকেই, শেখ মুজিবের হাত ধরে। পলক বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হতে পারে সবচেয়ে বড় অনুঘটক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
পচাত্তরের পর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধুর অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন বলে মনে করেন পলক। মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশকেই অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে নেন। পলক বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তথ্যপ্রযুক্তি হতে পারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কম্পিউটার আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার এবং মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসেন।
তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্য দিয়ে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল করে গড়ে তোলার ওয়াদা করে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ বিগত ১২ বছরেই ডিজিটালাইজেশনের মূল কাজটি করেছে। জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ খাতে গত ১২ বছরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় উন্নয়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ মডেল সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও প্রশংসিত। সেই সুবাধে গত ১২ বছরে অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এসব অর্জন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অন্যতম নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
পলক বলেন, আইসিটি বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চারটি প্রধান স্তম্ভ বা অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে- সবার জন্য কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন। এর বাইরে করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষ উদযাপনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্ষমতার কিছু উদাহরণ তুলে ধরে পলক বলেন, এ খাত থেকে এখন আমাদের বাৎসরিক রপ্তানি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ তরুণ-তরুণী এ খাতে তাদের ক্যারিয়ার গড়েছেন। আউটসোর্সিংয়ে আমরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা আজ এখানেই রোবট বানাচ্ছে, আইওটি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের জন্য পুরস্কার ও সম্মান বয়ে আনছে। দেশের অনেক মেধাবী তরুণের গড়ে তোলা স্টার্টাপ বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ আনছে।
স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে দেশ ও দেশের মানুষজন সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল হয়েছে বলে মনে করেন আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ মোবাইল সিম ব্যবহার করেন। প্রায় ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। করোনার মধ্যে আমরা দেখেছি যে, আমরা কীভাবে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারছি। আমি বলবো আমরা সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল হয়েছি কারণ আমরা ‘ডিজিটাল লাইফস্টাইলে’ প্রবেশ করেছি এবং তাতে অভ্যস্ত হয়েছি।
আলমাস কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন, সেটার ব্যাখ্যা করলে দেখবো সোনার বাংলার মাধ্যমে তিনি প্রশাসনে জবাবদিহিতা চেয়েছেন, সমাজে মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। তিনি চেয়েছেন দেশ ও জাতির উন্নতি। এসব কিছুই ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। সব পদ্ধতি ও লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হলে সেখানে জবাবদিহিতা থাকে। অটোমেশনের মাধ্যমে সবার অধিকার নিশ্চিত করা যায়। সরকারি অনেক সেবা এখন জনগণ ঘরে বসেও পাচ্ছেন। জনগণের জীবনমান সহজ হচ্ছে। এগুলোই তো তিনি চেয়েছিলেন। তার সোনার বাংলার আধুনিক রূপই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। তিনি যদি আজকের সময়ে এসে তার স্বপ্নের কথা বলতেন তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথাই বলতেন।
এত কিছুর পরেও যেসব বিষয়ে এখনও ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লাগেনি সেগুলোও দ্রুত অর্জিত হবে বলে বিশ্বাস রাখেন আলমাস। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট একটা পয়েন্ট না যে একটা জায়গায় এসে এটা থেমে যাবে। এটা একটা ‘জার্নি’। আমরা কেবল সেই জার্নিতে প্রবেশ করেছি। এখন সেই যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে এবং যেগুলো আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি সেগুলোও তখন আমরা অর্জন করতে পারবো।