‘আমার সন্তান পিতৃত্বের পরিচয় পেয়েছে। তার বয়স এখন ১৫ এবং সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। আমার উপস্থিতিতে আদালত ছেলের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে আসামিকে জামিন দিয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম সফল হয়েছে।’ শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেলে মোবাইলে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন রংপুরের মিঠাপুকুরে এক নারী।
গত বুধবার (২০ মার্চ) দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে হাইকোর্টের আদেশ পান তিনি। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহুরুল হকের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি আইনজীবী রফিক হাছনাইন ও আরডিআরএস কর্মকর্তা শমসে আরা বিলকিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে আগামী ২১ মে এই আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আসামির আইনজীবীকে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। আদেশ ঘোষণার সময় আসামি আসাদুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমি বুধবার রায় ঘোষণার সময় হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলাম। আমার সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় পেয়েছি। আমার সন্তান একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। তার বয়স এখন ১৫ বছর। দীর্ঘসময় ধরে আমাকে সন্তানের পরিচয় নিশ্চিত করতে লড়াই করতে হয়েছে। অবশেষে ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে আমার ছেলের বাবা আসাদুল। ’
এদিকে মামলার বিবরণের উদ্ধৃতি দিয়ে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার রফিক হাছনাইন জানান, ২০০৭ সালে মিঠাপুকুর উপজেলার একটি গ্রামে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে আসাদুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসাদুল বিয়ের কথা বলে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসাদুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটি বাদী হয়ে ২০০৭ সালের ৩ জুন আসাদুল ইসলাম ও তার বাবাকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ২২ ডিসেম্বর আসাদুলের নামে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আসাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক জাবিদ হোসাইন।
এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই ভুক্তভোগী কিশোরী ছেলে সন্তান জন্ম দেন। ছেলেটির ভরণপোষণ ও তার বাবার পরিচয় পেতে তিনি আইনি লড়াই করে যান। শেষ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে ছেলেটির বাবা আসাদুল ইসলাম।
আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে আসামি আসাদুল ইসলাম যে সম্পত্তি পেয়েছেন তার অর্ধেক লিখে দেওয়া শর্তে উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজনকে আদালতের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।