ভুল চিকিৎসায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ডা. সংযুক্তাসহ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটি।
শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এই সুপারিশ করেন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।
গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ডা. সংযুক্তা সাহাকে নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে শৃঙ্খলা কমিটি স্ব-উদ্যোগে এই সভা ডেকেছে। শৃঙ্খলা কমিটির কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ না আসলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রাখি না। তবে আমরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্বাহী কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। আমরা তাই করেছি। নির্বাহী কমিটি যদি এই বিষয়ে কিছু করণীয় মনে করে তারা তা সে পদক্ষেপ নেবে।
বিএমএ মহাসচিব বলেন, বিএমডিসি শৃঙ্খলা কমিটি যে হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে এবং যে চিকিৎসকরা এখানে জড়িত ছিলেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। তাদের বক্তব্য সংগ্রহ করে বিএমডিসির কাছে পাঠালে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে যে অভিযোগগুলো আসে, আমরা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করে থাকি। সেখানে যদি কোনো আইনের ব্যত্যয় পাই, তাহলে সে আইন অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
বিএমএ মহাসচিব জানান, শৃঙ্খলা কমিটি হওয়ার পরে প্রতি মাসেই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। আমরা দ্রুতসময়ের মধ্যে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় অনেকের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হয়। অনেককিছু আলামত গ্রহণ করতে হয়। এ সংক্রান্ত কিছু কমিটিও গঠন করতে হয়।
এ সময় আঁখি ও তার নবজাতকের ক্ষেত্রেও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ডা. সংযুক্তা সাহার নিবন্ধন নবায়নের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএমডিসি মহাসচিব বলেন, ডা. সংযুক্তা সাহা নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। তবে আবেদনের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নয়, তার নিবন্ধন নবায়নের বিষয়টি ‘আপ হেল্ড’ করে রাখা হয়েছে। যদিও বিএমডিসি ওয়েবসাইটে ডা. সংযুক্ত সাহার নিবন্ধন আপডেট দেখাচ্ছে।
চিকিৎসা গ্রহণে রোগীর সিদ্ধান্ত অগ্রাধিকার পাবে জানিয়ে ডা. এহতেশামুল হক বলেন, রোগী কার অধীনে অপারেশন করবেন- এটা একান্তই তার সিদ্ধান্ত। তিনি যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছেন, সে চিকিৎসককেই অপারেশন করতে হবে। ওই হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যদি সেই চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন, সে ক্ষেত্রেও রোগী সিদ্ধান্ত নেবেন অন্য কোনো চিকিৎসকের অধীনে অপারেশন করবেন কি না।
এ সময় রোগীদের আকর্ষণ ও প্রচারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ বা কন্টেন্ট তৈরি করাও নিয়ম বহির্ভূত ও চিকিৎসা নীতিবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএমএ মহাসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাত সদস্যের শৃঙ্খলা কমিটির মোট ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী ছাড়া বাকি চারজন হলেন- ডা. শেখ মোহাম্মাদ মোরশেদ, ডা. রোকেয়া সুলতানা, অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া।