ডলার সংকটে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে চাপে বাংলাদেশ

ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেলের দাম সময়মত পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ফলে আমদানিকৃত জ্বালানিতে ৩০ কোটি ডলারের বেশি বিল বকেয়া হয়েছে। এদিকে ভারত থেকে জ্বালানি আমদানির বকেয়া পরিশোধে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন ভারতীয় রুপিতে তা নিষ্পত্তি করতে পারে, সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করা না গেলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিপিসি। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি আগের পরিকল্পনার চেয়ে সরবরাহ কমিয়েও দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বাংলাদেশে ডলারের রিজার্ভ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। গত ১৭ মে তা নেমে হয়েছে ৩০ দশমিক ১৮ ডলার, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দেওয়ায় রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ইতোমধ্যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বিপিসি’র দেওয়া দুটি চিঠি পর্যালোচনা করেছে রয়টার্স। একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ছয়টি বিদেশি কোম্পানি বিপিসির কাছে ৩০০ মিলিয়নের বেশি পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের তুলনায় কম কার্গো পাঠিয়েছে অথবা সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।

গত ৯ মে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা/ডলারের ঘাটতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন ডলারের চাহিদা মেটাতে না পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সময়মত আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না।’

এই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভারতের নুমিলগড় রিফাইনারিকে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে, যেখানে ইন্ডিয়ান অয়েলের কাছে ডিজেল ও জেট ফুয়েল বাবদ ১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার বকেয়া পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে ভারতীয় রুপিতে বকেয়া নিষ্পত্তি করতে পারে তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।

এর আগে, গত এপ্রিলে দেওয়া আরেক চিঠিতে বিপিসি বলেছিল, ‘মে মাসের সূচি অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করা না গেলে জ্বালানির মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে। তাতে সারাদেশে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।’

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পায়নি রয়টার্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ডলারের মজুত রক্ষা করাকে আপাতত সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিপিসি প্রতি মাসে ৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি এবং ১০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে থাকে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৭ লাখ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়েছিল। এই চাহিদা প্রতিবছরই ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ডলার সংকটে কৃচ্ছতাসাধন নীতি মেনে চলার মধ্যে ১৯ অক্টোবরের এক বৈঠকে ২০২৩ সালের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বাংলাদেশের জ্বালানি তেল সরবরাহকারীদের মধ্যে আছে— চীনের ইউনিপেক, পেট্রোচায়না, সিঙ্গাপুরের ভিটল, দুবাইয়ের ইনওসি, ভারতের ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশন এবং ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। আবার কেউ কেউ নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কম জ্বালানি পাঠিয়েছে।’

এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, রিজার্ভ কমতে থাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms below to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.