বিশ্বব্যাপী এখনো রয়েছে করোনা মহামারির রেশ। কবে কাটবে কেউ জানে না। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। ইউক্রেনের ওপর হামলার জের ধরে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার বেশির ভাগই অর্থনৈতিক। বিশ্বব্যবস্থার এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা, গম ইত্যাদি খাদ্যপণ্যের বাইরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। এর বড় প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে তার প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যানবাহন, কৃষি—সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়বে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেনে সংঘাতের পরিবেশ যত দিন বজায় থাকবে, তত দিন সোনার দাম বাড়তেই থাকবে এবং এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্য রয়েছে। দেশ দুটিতে তৈরি পোশাক, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আবার গমসহ আরো বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। জ্বালানি তেলের বাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে ইউক্রেন পরিস্থিতি। তেল উত্পাদনে রাশিয়া তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাই বহু দেশই জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, উত্পাদন ধাক্কা খেলে তেলের জোগান তলানিতে যাবে। তখন দামও চড়তে থাকবে। জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর দেশ। এই সংঘাতের কারণে তেলের বাজার সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। দ্রুতই দাম বাড়ছে। ২০১৪ সালের পর আবার তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারে পৌঁছেছে। এই দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে। আমদানিনির্ভর সব দেশই সমস্যায় পড়বে, তাই বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। আর এতে করে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও চাপে পড়তে পারে। এর ফলে সার্বিকভাবে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এই যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব প্রায় নিশ্চিত।
এদিকে বাংলাদেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আর ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে গ্রাহক পর্যায়েও। মূলত, করোনার পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উন্মুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিত্সা, ভ্রমণ ও পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ায় অনেকেই এখন বিদেশে যাচ্ছেন। এ কারণে নগদ ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে। ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে—এমন আশায় অনেকে ডলার আটকে রেখেছেন বলে জানা গেছে। এতে সমস্যা আরো বাড়ছে।
বর্তমানে খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) এক ডলার কিনতে প্রায় ৯০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। গত ১০ নভেম্বর যেখানে প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা, সেখানে গতকাল তা ছিল ৮৬ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বাড়তি চাহিদার কারণে ডলারের দাম কিছুটা বাড়তি। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। ফলে দাম বাড়লেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।