সাত মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন জীবন কাটাচ্ছেন ভোলার দুই ইউনিয়নের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। সাবমেরিন ক্যাবলের ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ও লাইনসহ বৈদ্যুতিক সামগ্রী। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুতের কারণে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা। দ্রুত বিদ্যুৎ ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে জনবসতি শুরুর ২ যুগেরও অধিক সময় পর তিনটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এতে চরের অধিকাংশ বাসিন্দাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় বদলেও যায় চরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাও।
কিন্তু ওই বছরই ১৮ ডিসেম্বর সদরের ইলিশবাড়ি পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীতে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলটিতে দ্রুটি দেখা দেয়। পরে ২০২২ সালের মে মাসের ২২ তারিখ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটিতেও ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চললেও সেটিও ২৩ জুন ত্রুটিপূর্ণ হলে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সাবমেরিন ক্যাবলের ত্রুটির সাত মাসেও মেরামত হয়নি। ফলে দীর্ঘদীন ধরে অন্ধকারে জীবন কাটাচ্ছেন দুই চরের বাসিন্দারা।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা স্বপন দে জানান, গত বছর ২৩ জুন আমাদের মদনপুর ইউনিয়ন ও পাশের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের সাবমেরিন ক্যাবলের ত্রুটির কারণে পুরোপুরি বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। কবে নাগাদ ঠিক হবে তাও জানি না।
তারা বলেন, দুই চরে যখন বিদ্যুৎ এসেছিল তখন চর আলোকিত হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর এখন আমাদের দুইটি চরই অন্ধকারে রয়েছে।
মদনপুরের বাসিন্দা ছকিনা বেগম ও রাজিয়া বেগম জানান, মদনপুরে বিদ্যুৎ আসার পর তারা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘরে বিদ্যুৎ নিয়েছিলেন। টিভি, ফ্রিজ, লাইট ও ফ্যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনেছেন। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ সাত মাস ধরে না থাকায় সব কিছুই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
রুহুল আমিন ও মো. হেলাল জানান, চরে বিদ্যুৎ আসার পর তারা বিদ্যুতের দোকান দিয়েছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে মালামাল উঠিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এখন আর দোকান চলে না। এনজিওর কিস্তিও দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় তারা দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন জানান, ওই এলাকার মেঘনা নদীতে অতিরিক্ত জাহাজ নোঙর করে রাখায় সাবমেরিন ক্যাবলটি ছিঁড়ে যায়। ছিঁড়ে যাওয়া ক্যাবলটি মেরামতের জন্য প্রশাসনিক আনুমতি পেয়েছেন। এখন শুধু আর্থিক আনুমোদন পেলেই এক মাসের মধ্যে আবারও সচল হবে দুই চরের বিদ্যুৎ।
মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের আওতায় ১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন টেনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয় ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মাঝের চর ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে। দুই চরে বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৮ শতাধিক।