রাণীশংকৈল উপজেলায় গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্চিত করা, পোলিং এজেন্ট, বিজয়ী প্রার্থীর ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় ১৪ জনকে এজাহারভূক্ত ও অজ্ঞাত ৩৫০ জনকে আসামি করে রাণীশংকৈল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
১৪ নভেম্বর রোববার রাত আড়াইটায় এসআই বদিউজ্জামানসহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে আবুল হোসেন (৪০), শাহ আলম (৬০), আব্দুল হালিম (৩৩) ও মো. হানিফকে (৫০) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তাদের বাড়ি নেকমরদ ঘনশ্যামপুর গ্রামে।
বৃহস্পতিবার ভোটের দিন নেকমরদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড জি-কোকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ভোট চলাকালে এবং গণনার সময় ওই চারজন আসামিসহ অনেকেই রাতে ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়ে ও রাস্তা কেটে সহিংসতা সৃষ্টি করে। এতে প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চরম বিপদে পড়েন। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ও ভোটকেন্দ্র থেকে আসতে সক্ষম হন।
প্রিজাইডিং অফিসার হেলালউদ্দিন ১৪ জনকে আসামি করে রাণীশংকৈল থানায় মামলা করেন। মামলায় আরও অজ্ঞাত ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার কারণে গ্রেফতার আতঙ্কে নেকমরদের জোতপাড়া, টাঙাইলপাড়া ও ময়মনসিংহ পাড়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।গ্রেফতারের ভয়ে কোনো পুরুষ থাকছেন না বাসায়। স্বামী ছাড়া ছেলে সন্তান নিয়ে বিপাকে গ্রামের মহিলারা।
আম্বিয়া বেগম নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী খুব কষ্ট করে। মাছ ধরে সংসার চলে। আমার ৭টি মেয়ে। তারা খুব কষ্টে আছে। আমার স্বামীর পায়ে ও কোমড়ে ঘা, ভালভাবে চলতে পারেনা। ভোটের দিন যখন মারামারি হয় আমরা যায়নি। আমার সন্তানের খুব জ্বর ছিল। পরে শুনতেছি সবার নামে মামলা হয়ছে। এখন আমার স্বামী গ্রেফতারের ভয়ে বাসায় থাকেনা। কীভাবে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে থাকব।
রোকেয়া খাতুন নামে অন্য একজন বলেন, সকালে আমরা ভোট দিয়ে চলে এসেছি। পরে শুনলাম মারামারি হয়ছে। আমরা যায়নি, কারা করছে তাও জানি না। এখন শুনতেছি সবার নামে মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। এই ভয়ে বাসায় কেউ থাকে না। পাকা ফসল কাটতে পারছি না, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা দিনমজুর মানুষ, কী করব এখন? ভোট দেওয়াটাই কি আমাদের অপরাধ?
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, নেকমরদ ইউনিয়নের জি কোকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রিজাইডিং অফিসার ১৪ জনকে এজহারভূক্ত ও অজ্ঞাত ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (১৫ নভেম্বর) তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।