একদিকে, শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কল রেকর্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করার নির্দেশনা পাওয়া গেছে, অন্যদিকে সরকারও এই কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কীভাবে দেখছেন এবং এর পরিণতি কি হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি— ১০ নভেম্বরের নূর হোসেন দিবসে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে গণমিছিল করবে। তবে, গত শুক্রবার একটি অডিও কল রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের সাম্প্রতিক নির্বাচনে আবারো প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলে আসার নির্দেশ দেন। যদিও এই অডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম জানিয়েছেন, ‘‘যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে অংশ নিতে পারে, এতে কোনো সমস্যা নেই।’’
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। কিছু নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কেউ কেউ আটকও হয়েছেন। সরকার পতনের পর পরই ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়েন। এরপর গত তিন মাসে আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি দেখা যায়নি।
১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত নূর হোসেনকে স্মরণে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর এই দিবসটি পালন করা হয়। এবারও আওয়ামী লীগ তাদের ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এটি আওয়ামী লীগের রুটিন কর্মসূচি। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, আমরা নূর হোসেনকে স্মরণ করব।’’
তবে, কেন হঠাৎ এই কর্মসূচি এতটা গুরুত্ব সহকারে পালনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, ‘‘এখন মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, সরকার জনগণের কণ্ঠরোধ করেছে, তাই আমাদের এই কর্মসূচি।’’
এছাড়া, শেখ হাসিনার একটি অডিও কল রেকর্ডে তাকে নেতাকর্মীদের ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলে আসার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। এই কল রেকর্ডের সত্যতা নিয়ে বিভিন্ন সন্দেহ রয়েছে। তবে, দলের আরেক নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এটি সম্ভবত সত্য নয়।’’
শুক্রবার কল রেকর্ডটি প্রকাশিত হওয়ার পর, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ এখন একটি ফ্যাসিস্ট দল, তাদের কোনো প্রতিবাদ সমাবেশ হতে দেওয়া হবে না।’’
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্ররা জানে কীভাবে লড়াই করতে হয়, আমরা প্রতিবাদ জানাবো।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি আসলে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা, কিন্তু মাঠে তারা শেষ পর্যন্ত নামবে কিনা, তা বলা কঠিন।’’ সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীও মাঠে নামতে পারে।
এই বিশ্লেষকের কথার একটি চিত্র অবশ্য ফুটে উঠেছে শনিবার রাতেই। দৃশ্যপট বলছে— শনিবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে চোখে পড়ার মতো অবস্থান দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরও। সূত্র: বিবিসি