জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে করোনার টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটির সাধারণ বিতর্কে তিনি এ আহ্বান জানান। রাবাব ফাতিমা বলেন, টিকা লাভে সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী অধিকার নিশ্চিত করতে অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে সবাই কোভিড-১৯ সংকট থেকে টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত পুনরুদ্ধারের সুযোগ পায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অনুসরণে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, টিকা উৎপাদনে সক্ষম উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তি ভাগ করে নিলে উৎপাদন ও বিতরণ পর্যায়ে বিশাল সক্ষমতা সৃষ্টি হবে, যা টিকার সমতা নিশ্চিত করতে পারবে।
সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটি কোভিড-১৯ অতিমারি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দ্বৈত সংকটকালে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘সংকট, প্রতিকূলতা মোকবিলায় সক্ষমতা এবং পুনরুদ্ধার-এজেন্ডা ২০৩০ এর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা’। প্রতিপাদ্যের লক্ষ্য অতিমারি থেকে টেকসই ও সক্ষমতাপূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপকে এগিয়ে নেওয়া এবং যথাসময়ে এজেন্ডা ২০৩০ অর্জন করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায় গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, আসন্ন জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক রাষ্ট্র সম্মেলনে যাতে সাহসী ও উচ্চাভিলাষী ফলাফল অর্জিত হতে পারে, সে বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ৪৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাস, জলবায়ু-অর্থায়ন বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর সহজতর করা এবং অভিযোজন পদক্ষেপসমূহের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
দেশের বাইরে থেকে আসা অর্থায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, ওডিএ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি অর্থায়ন পুনরুজ্জীবিত করতে উন্নয়ন অংশীদারদের যে ভূমিকা রয়েছে, তা পালনের প্রতি অনুরোধ জানান। রেমিটেন্সের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় চাকরি পুনঃপ্রাপ্তিতে অভিবাসী কর্মীদের অন্তর্ভূক্ত রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ডিজিটাল বৈষম্য দূর কল্পে সব অংশীজনদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি এলডিসিসহ সদ্য উত্তরিত দেশগুলোর জন্য সাহসী ও উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি গ্রহণেরও আহ্বান জানান। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে নারীদের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও উত্তরণ প্রচেষ্টায় অবশ্যই নারীদের সম্মুখসারিতে স্থান দিতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়াবলী নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটি কাজ করে থাকে।