করোনাভাইরাস মহামারি থেকে সুরক্ষা দিতে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য অনলাইন নিবন্ধন ঝামেলা এড়িয়ে দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর কেন্দ্রে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে আজও। রাজধানীর একটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শহর, বন্দর ও গ্রামে চলছে এ গণটিকা কার্যক্রম। তবে কেন্দ্রগুলোতে অনেকেই টিকা না নিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে। টিকা পাওয়া অনিশ্চিত জেনেও ভোর থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। অনেক কেন্দ্রে টিকার সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষকে টিকা নিতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করেও টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
কিছুদিন আগেও টিকা দিতে এত মানুষের আগ্রহ দেখা যায়নি। অনলাইনে নিবন্ধনে ঝামেলা ছাড়া সহজে কেন্দ্রে এসে টিকা নেওয়ার সুযোগ থাকায় অনেকে আগ্রহী হয়েছেন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ এসব টিকা কেন্দ্রে বেশি ভিড় করছে। এছাড়া করোনার ভয়ানক পরিস্থিতি দেখে নিজেকে নিরাপদে রাখতে টিকা নিতে এসেছেন অনেকেই। সরেজমিনে, আজ বুধবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় গণটিকা কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। কিছু কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলারও অভিযোগ উঠেছে।
ধানমন্ডি টিকাকেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে অপেক্ষা করছে। অনেকেই ফজর নামাজ আদায় করে, কেউ কেউ আরও আগে কিংবা রাত থেকেই অপেক্ষা করছে। এমনকি অনেকেই দুপুর ১২টা পেরিয়ে গেলে টিকা পাবে কী না অনিশ্চয়তা মধ্যে রয়েছেন। ধানমন্ডি ৫ নম্বর থেকে ভোর সাড়ে ৫টা মধ্যে ধানমন্ডি লেকের টিকা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়ান ব্যবসায়ী জব্বার খান। তিনি বলেন, ‘ভোরে এসেছি টিকা নিতে, এখন বাজে দুপুর সাড়ে ১২টা। এখনও লম্বা লাইন। আদৌও টিকা পাব কি না অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। একটু পরে হয়তো বলবে টিকা শেষ হয়ে গেছে। তখন টিকা না নিয়েই বাসায় ফিরতে হবে। এখানে অনেকে বিশৃঙ্খলাও তৈরি করছে।’ স্বজনপ্রীতি করে অনেকে লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
একই টিকা কেন্দ্রে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফজর নামাজ শেষ করেই টিকা কেন্দ্রে এসে লাইন দাঁড়িয়েছি।’ তিনিও বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর পারছি না। হঠাৎ করে বৃষ্টি নামলো। এজন্য আমার জায়গায় একজনকে দাঁড় করিয়ে বসলাম। আর কখন টিকা পাব বুঝতেছি না। দেখছেনই তো অনেক ঝামেলা হচ্ছে। টিকা নিতে আসা অনেককে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও কেন্দ্রে অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি লেক টিকা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান ইমন দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সকাল ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু করেছি, চলবে ৩টা পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি কোন ঝামেলা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে সবাইকে টিকা দেওয়ার। তবে আমাদের কাছে টিকা তো কম। সাড়ে ৩০০ টিকার বিপরীতে আনুমানিক দুই হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে। আমরা কীভাবে সবাইকে টিকা দিবো। নির্ধারিত টিকা শেষ হলে যেকোনো সময় আজকের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
টিকাকেন্দ্রে অনিয়ম হচ্ছে-এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে, সবাইকে তো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তাই কিছু বিশৃঙ্খলাও তৈরি হচ্ছে।’ সারাদেশে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে সকাল ৯টা থেকে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত। চলমান ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে ৩২ হাজার ৭০৬ জন কর্মী ও ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন সেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।