সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেল আজ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে টানেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শনিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গায় কর্ণফুলীর পশ্চিমতীরে একটি উদ্বোধন শেষে টানেল পার হয়ে আনোয়ারায় নদীর দক্ষিণতীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়নই টানেল নির্মাণের অন্যতম কারণ। এতে বাঁচবে চলাচলের খরচ ও সময়।
প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক তিন-নয় কিলোমিটার। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার, আনোয়ারা প্রান্তে ব্রিজ ৭২৭ মিটার। আন্ডারপাসের সংখ্যা ছয়টি। কালভার্ট ১২টি। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়ায় আছে ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলো মোটেল মেস, হেলথ সেন্টারসহ অনেক কিছু। টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। এতে তুলে ধরবেন তাঁর সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্র। এই জনসভায় ১০ লাখ নেতা-কর্মীর সমাবেশ করতে চায় চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে টানেলের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। ৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।
এরই মধ্যে টানেলের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে টানেলটির দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ। টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, প্রথম পাঁচ বছর চায়নার একটা কোম্পানি টানেল পরিচালনা করবেন। এরই মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়েছে।
খরস্রোতা কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে এমন অবকাঠামোকে দেশের সামর্থ্যের অনন্য উদাহরণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে । চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশগুলো যেমন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর হয়ে আমাদের যে যাতায়াত করতে হত সে সময়টি বেঁচে যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে এবং জিডিপিতে বড় অবদান থাকবে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা মুখী যান চলাচল করবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।