টাকার জন্য তিন ব্যবসায়ীকে আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ পরে চার লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁরা রক্ষা পেয়েছে৷ অভিযোগটি হলো ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে৷
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা হলেন: মহেশপুরের কাজীরবেড় ইউনিয়নের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, একই ইউনিয়নের জিন্নানগর বাজারের গরু ব্যবসায়ী সমশের আলী ও তাঁর ছেলে মুদি দোকানি এনামুল হক৷
মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, গরুর ব্যবসার কারণে তাঁকে সব সময় টাকাপয়সার লেনদেন করতে হয়। ওই দিনও তিনি পার্শ্ববর্তী জীবননগর উপজেলা সদরে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি মাছের ব্যাগ। ফেরার পথে বিকেলে মহেশপুরের নেপার মোড়ে তাঁর মোটরসাইকেলে ওই ব্যাগটি দেখে মহেশপুর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের সাত-আট সদস্যের একটি দল পিছু নেয়। তিনি জিন্নানগর বাজারের সমশের আলীর বাড়িতে আসার পর পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এ সময় ওসি তাঁর ব্যাগটির কথা জানতে চান৷ সেটা মাছের ব্যাগ বললে তিনি তা বিশ্বাস করেননি৷ ওসি বলেন, ওই ব্যাগে টাকা ছিল। এরপর মাছসহ ব্যাগটি দেখানো হয়৷ এর পরও তঁাদের তিনজনকে ধরে নিয়ে যান ওসি৷ এ সময় তাঁর (মোহাম্মদ আলী) পকেটে থাকা ৪৮ হাজার ও সমশের আলীর কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন ওসি৷
অপর ব্যবসায়ী সমশের আলী বলেন, ‘গাড়িতে তুলেই আমাদের মারপিট শুরু করে পুলিশ। ওসি বলেন, হুন্ডির ব্যবসা করিস, তিনজনের মুক্তি বাবদ ছয় লাখ টাকা দিতে হবে।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সমশের আলী বলেন, টাকার জন্য তাঁদের রাতভর নানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। একসময় তাঁদের চোখ বেঁধে একটি মাঠে নিয়ে বলা হয়, দ্রুত টাকার ব্যবস্থা না করলে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। এ সময় টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের রশি দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন বাজারে ঘোরানোর পর দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে আসা হয়। রাত দুইটার দিকে তাঁদের মহেশপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাড়ির লোকজনকে দেখে তাঁরা প্রাণ ফিরে পান। এ সময় মোহাম্মদ আলীকে আগের এক লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
পরে সমশের আলীর সঙ্গে তিন লাখ টাকায় চুক্তি হয় এবং তাঁর ছেলে এনামুলকে সেই টাকার ব্যবস্থা করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে এনামুল বাড়িতে গিয়ে তিন লাখ টাকা ব্যবস্থা করে এনে ওসিকে দেন৷ ভোর পঁাচটার দিকে তাঁকেও (সমশের আলী) ছেড়ে দেওয়া হয়৷
জানতে চাইলে আটক ব্যবসায়ীদের নির্যাতন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী খান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধৃতরা ভারতের সাথে হুন্ডির ব্যবসা করেন। তাঁরা খারাপ লোক। তাঁদের গতিবিধি খারাপ মনে হওয়ায় আটক করা হয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজনের কথায় তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।’