লালন-সম্রাজ্ঞী লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন ধরেই লিভারের রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছেন। এখন তার অবস্থা আরও গুরুতর। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা। এরইমধ্যে নেটদুনিয়ায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না জনপ্রিয় এ সংগীতশিল্পী।
আর্থিক সংকটের কারণে তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না, এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ফরিদার পরিবার। এ বিষয় সংগীতশিল্পীর ছেলে ইমাম ফাজর নোমানী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফরিদা পারভীনের অসুস্থতার খবর জানার পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুদানের কথা বলা হয়েছিল। তবে ফরিদা পারভীন সম্মানের সঙ্গে তা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সবধরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নোমানী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ওনার (ফরিদা পারভিন) কিডনির সমস্যা। অনেকদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়ালাইসিস শুরু হওয়ার পর থেকে তার শরীরটা খারাপ। এখন সব রকম চিকিৎসা চলছে। ওনার অসুস্থতার কথা জানার পর উপদেষ্টারা অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে আর্থিক সহায়তা লাগবে কি না? মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য করতে চাওয়ার বিষয় জানতে পারলে আমার আম্মা (ফরিদা পারভীন) বলেছেন, সে কোনো অনুদান নিতে রাজি হননি।
ফরিদা পারভীনের ছেলে যোগ করেন, মা জানিয়েছেন চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সক্ষমতা আমার পরিবারের আছে। তিনি (ফরিদা পারভীন) প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকার যে অনুদানটা তাকে দিতেন সেটা অসহায় ও দুস্থ শিল্পী যারা আছেন তাদেরকে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আর্থিক অনুদান না নেওয়ার বিষয়টা খুব সম্মানের সঙ্গে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
নোমানী আরও বলেন, আমাদের জায়গা থেকে আম্মার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য আছে। তাছাড়া আমরা যদি ব্যয়ভার বহন নাও করি। আম্মার নিজের অর্থ দিয়ে নিজের চিকিৎসা করার সামর্থ্য আছে।
অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না গুণী এ সংগীতশিল্পী এমন খবরে বিব্রত ফরিদা পারভীনের পরিবার। এই প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নোমানী বলেন, যারা বিভিন্ন কথা ছড়াচ্ছেন তারা আম্মাকে কতটা সম্মান ও ভালোবাসেন তা আমার জানা নেই। তারা যদি সত্যি আম্মাকে সম্মান করতেন তাহলে এভাবে সম্মান নষ্ট করতেন না। বিভ্রান্তিকর নিউজগুলো যখন তার সামনে আসে তখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সংবাদগুলোর প্রভাব সরাসরি আম্মার ওপরেও পড়ছে। সে তো এগুলো নিতে পারছেন না। তার আত্মসম্মানের জায়গাটা তিনি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেন। অসুস্থ অবস্থায় পরিচিত কারও থেকে এধরণের কথা জানতে পারলে বেশি অসুস্থ হয়ে যান।
শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ফরিদা পারভীনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে তার ছেলে নোমানী বলেন, বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন করে ডায়ালইসিস চলছে। গত কয়েদিনের তুলনায় এখন বেশি অসুস্থ। ডাক্তাররা যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের দিকে দেশের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পান। ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৯৩ সালে সিনেমার গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এ শিল্পী।