পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া (১৮)। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট রাতে পারিবারিক কলহে আপন চাচাতো ভাইয়ের ছোড়া অ্যাসিডে ঝলসে যান সুমাইয়া ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী (১২)। স্থানীয়ভাবে মোহাম্মদ আলী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও সুমাইয়াকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চলায় শেষ হয়ে গেছে টাকা। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে সুমাইয়াকে রেখেই দেশে ফিরে এসেছেন বাবা-মা।
সুমাইয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রামের রাজা মিয়া গাজী ও তাসলিমা বেগম দম্পতির মেয়ে।
এদিকে অর্থের অভাবে সুমাইয়া ওষুধ কিনে খেতে পারছেন না। তার বাবা-মাও দেশে চলে আসায় ভারতে তিনি এখন একা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সুমাইয়া কান্নাকাটি করে একটি ভিডিও বার্তা বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো.সাইদুল ইসলামের হোয়াটস অ্যাপে নম্বরে পাঠিয়েছেন।
সুমাইয়া বলেন, আমার চাচাতো ভাই আমার শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এরপর চিকিৎসার জন্য আমার বাবা ও মা আমাকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যাই। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে বাবা দেশের বাড়িতে চলে যান। গত ২-৩ দিন আগে মাও চলে যান। এখন আমি ভেলোরে একা পড়ে আছি। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে না পারায় আমার মুখ ফুলে উঠেছে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাবা আমার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
সুমাইয়া আকুতি জানিয়ে বলেন, আপনারা আমার চিকিৎসা খরচ যোগান দিয়ে আমাকে একটু বাঁচান। আমি আর অ্যাসিডের পোড়া যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ, আপনারা আমাকে বাঁচান।
এ প্রসঙ্গে সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী বলেন, ‘আমি আইছি এক মাস হইছে, বাড়িতে ধান পান আছে মাড়াই করা লাগবে এ জন্য। আওয়ার পর ২০ হাজার টাকাও পাঠাইছিলাম, আবার পাঠামু।’
সুমাইয়ার মা তসলিমা বেগম বলেন, ‘আজকেও আমার মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। স্যালাইন চলতেছে, আমি ভারত থেকে চলে এসেছি কারণ টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেছে। টাকা-পয়সা আবার সংগ্রহ করে তারপর যাব।’
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাজেদুল ইসলাম বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত সুমাইয়া ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেছেন। তিনি খুব কষ্টে আছেন কারণ যারা তাকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছিল তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছিল তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ টাকা তারা বহন করবে। কিন্তু এখন ভারতে সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন এনজিও ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করছি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত শেষে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। মেয়েটি আমাকে যে বার্তা পাঠিয়েছে, সেটি আমরা মানবিক দৃষ্টিতে দেখছি।
প্রসঙ্গত, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট সুমাইয়ার খালা রেবেকা বেগম বাদী হয়ে ওই এলাকার এনায়েত গাজীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর এনায়েত গাজী (৩০), রাসেল গাজী (৩০) ও রাসেলের স্ত্রী মারিয়া বেগমের (২০) নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।