সড়কের পাশেই সম্প্রতি প্রায় ৩০ ফুট গভীর খনন করা পুকুরই যেন মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। একে একে পুকুর থেকে তোলা হয় ১৭ জনের মরদেহ। এ ছাড়া আরও অন্তত ৩৫ জনকে পুকুরটি থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
বাসের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও পুকুরের গভীরতা কারণেই দুর্ঘটনা ও এত মৃত্যু।
শনিবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বাসার স্মৃতি পরিবহন নামের যাত্রীবাহী বাসটি ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ছাদে ও ভেতরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল।
বাসে থাকা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আহত যাত্রী আজাদ হোসেন (৫০) জানান, তিনি লক্ষ্মীপুর থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া যান। এরপর বরিশালের উদ্দেশে এই বাসে ওঠেন। ভেতরে বসা ও দাঁড়ানো অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল। গাড়ির ছাদেও নেওয়া হয় যাত্রী। চালকের অদক্ষতায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পিয়ারা বেগম (৪৫) নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, ছোট মেয়ে সুমাইয়াকে (৬) নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। আমি কোনো রকমে জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েকে হাতের কাছে পেয়ে টেনে নিয়ে বের হই। তখন দেখি সে মৃত। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর যাত্রী নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশে বাসটিতে যাচ্ছিলাম। গাড়ির ভেতরে ও ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আমি ৩-৪ মিনিট পানির নিচে থাকার পর জানালা দিয়ে বের হই।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শহিকুল ইসলাম জানান, পুকুরটি প্রায় ৩০ ফুট গভীর হওয়ায় এত বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত এসে পাম্প লাগিয়ে পুকুরটি সেচ দিয়ে পানি কমানোয় অনেককে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়নি, তদন্তে কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া সড়কের পাশে এমন গভীর পুকুর খননও যাতে না করে কেউ সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঝালকাঠি পুলিশি সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, পুলিশ বিভাগের ডিআইজি নিহতদের দাফন ও সৎকারের জন্য জন প্রতি ১ লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।