মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কারাগারে নাকি তাদের ১৩ নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। জেলখানায় যারা বন্দি আছে তারাও মানুষ, তাদেরও মৃত্যু হতে পারে। এ রকম মৃত্যুর খবর প্রায়ই আমরা বাইরে জানি। এ সংখ্যাটা ১৪-১৫ সে রকম বেরিয়েছে। এখন জেলে যে বন্দি অবস্থায় আছে তার কি মৃত্যু হবে না? এখন জেলে যে সব লোক মারা গেছেন তারা যে বিএনপির, এটা কীভাবে দাবি করে তারা। তাহলে তারা (বিএনপি) তালিকা দিক, কারা কারা মারা গেছে এবং তারা কোথায় কোথায় বিএনপির কি দায়িত্বে ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা গুমের অনেক খবর জানি। কক্সবাজারের সালাউদ্দিন যখন ওপারে ধরা পড়ে, তখন সে ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাস্তায়। ধরা পড়ার আগে বিএনপি অপপ্রচারই করেছিল যে সালাউদ্দিনকে গুম করা হয়েছে। তারপরে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফরহাদ মজহার, তার সম্পর্কেও একই রকম অপপ্রচার করা হয়েছিল। পরে তাকে পাওয়া গেলো খুলনার মার্কেটে। অথচ আমাদের যে মাফুজ বাবুকে নিয়ে (নগর ছাত্রলীগের নেতা) তারা (বিএনপি) গুম করল সে বিষয়ে কোনো কথা বলে না। চট্টগ্রামে জামালউদ্দিন তাদের (বিএনপির) পার্টির নেতা। জামালউদ্দিন হঠাৎ অপহরণ, গুম হয়। তারপর এক সময় তারা দোষ চাপাল যে আওয়ামী লীগ তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে। কিন্তু পরে দেখা গেলো যে জামালউদ্দিনকে তারাই (বিএনপি) অপহরণ করে খুন করেছে।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, কাজেই আমরা এখনো বলতে চাই, গুম খুন এসব মিথ্যে তথ্য উপাত্ত ছাড়া, মিথ্যাচার যে তারা করছে সত্যটা কী? কারা গুম হয়েছে তাদের তালিকা দেখতে চাই। তারা অন্ধকারে বারবার ঢিল ছুড়বে সেটা হয় না। এটা রাজনীতি নয়। তাদের রাজনীতি এখন লিফলেট বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু লিফলেট বিতরণ করে ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে না। লিফলেটের ভাষা দিয়ে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার কোনো স্পেস নেই।
গুম খুনের জন্য বিএনপি আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি করবে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে এবং বিএনপি আমলে কত হত্যা, কত গুম হয়েছে সেটারও হিসাব হোক। সব হিসেবই আসুক। কোন আমলে কত মানুষ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খুন হয়েছে, হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে এরও হিসাব দিতে হবে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক সরকারের অবসান ঘটানোর কথা বলছেন বিএনপি নেতারা, এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ধরনের স্লোগান এতদিন গৃহবন্দি ছিল। নতুন কোনো কথা, কয়েকদিন পরে বলবে সরকারের পদত্যাগ চাই, সরকারের পতন চাই, সরকারকে পালিয়ে যেতে হবে, আবার বলবে শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে, বিএনপির এসব কথার কোন মূল্য আছে? বিএনপির একটা ২৮ দফা,এক দফা সবই তো ভুয়া।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, মঈন খান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেছেন। এটা করতেই পারেন। সেখানে ষড়যন্ত্র আভাস খোঁজার কিছু নেই। সব ব্যাপারে ষড়যন্ত্র দেখার কিছু নেই। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা ব্যথার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন না তিনি।
সংরক্ষিত আসনে ১৪ দলের শরিকরা মনোনয়ন পাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভবনে আগামীকাল আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আছে। ১৪ দলের ব্যাপারে আমাদের নেত্রী অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন। তবে নিয়মানুযায়ী তাদের পাওয়ার সুযোগ নেই। বাকিটা আগামীকাল বৈঠকের পর জানা যাবে।
মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা অস্ত্র হাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন। সে রকম কিছু হলে আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী, বিদেশি কারো অনুপ্রবেশ ঘটে। তাহলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে এবং অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।