সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে বুধবার (২৮ জুন) দেশের বেশ কিছু জেলায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। এসব জেলায় একদিন আগেই ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দিয়েছেন মুসল্লিরা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) একযোগে সারাদেশে পালিত হবে ঈদুল আজহা। কিন্তু সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আজ বুধবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বেশ কিছু জেলার শতাধিক গ্রামে আজ ঈদ উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড, ফরিদপুর, লালমনিরহাট, মাদারীপুর, চাঁদপুর, পিরোজপুর, নোয়াখালী ও কুড়িগ্রামের বেশ কয়েকটি গ্রামে ঈদ উদযাপনের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগের ৭৩টি মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগের অন্তত ২০ হাজার পরিবার ঈদ উদযাপন করছে। এরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগিরিয়া শাহসুফি দরবার শরিফের অনুসারী।
বুধবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়া চৌধুরী বাড়ি শাহ-মমতাজিয়া জামে মসজিদ ও ২৩নং ওয়ার্ডের তাঁজকাঠী হাজি বাড়ি শাহসুফি জাহাগিরিয়া জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আগাম ঈদ পালন করেন চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগিরিয়া শাহসুফি দরবার শরিফের অনুসারীরা। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ যাবতীয় ধর্মীয় আচার পালন করেন তারা।
তাঁজকাঠী হাজি বাড়ি শাহসুফি জাহাগিরিয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মিঠু জানান, নগরীর ৭টি মসজিদ, বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া, নলছিটির দপদপিয়া, পটুয়াখালীর বাউফল, বগা, ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনার ডাবুয়াসহ বিভাগের ৭৩টি মসজিদে শনিবার ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদ জামাত শেষে তারা মহান সৃষ্টিকর্তার নামে পশু কোরবানিসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন। বিভাগের অন্তত ২০ হাজার পরিবারের ১ লাখ মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছেন বলে তিনি জানান।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের প্রায় ৪০টি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।
বুধবার (২৮ জুন) সকালে সুরেশ্বর দরবার শরীফের ১০ হাজার অনুসারী দরবার শরীফের মাঠে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। নামাজে ইমামতি করেন গদীনসীন পীর বেলাল নূরী। এই জেলার ছয় উপজেলার ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ১৯২৮ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব পালন করে আসছে। এবছর সুরেশ্বর দরবার শরীফে ঈদের জামাত শেষে সেমাই পোলাও খাওয়ার মাধ্যমে ঈদুল আজহা পালন করা হয়। নামাজ শেষে ভক্তবৃন্দরা যার যার বাড়িতে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করেছেন।
ঈদের জামাতে মোনাজাত শেষে সুরেশ্বর পীরের বর্তমান গদিনীশীন মুত্তাওয়ালী সৈয়দ কামাল নুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদুল আজহার নামাজ শেষে ঈদের উৎসব পালন করছি। শরীয়তপুর জেলার ৪০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার ভক্তরা আমাদের সঙ্গে ঈদ পালন করেছে।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে তিনটি স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় উপজেলার পৌর এলাকার চটকাবাড়িয়া গ্রামের মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদের নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।
এছাড়া উপজেলার ভালকি ও নিত্যানন্দপুর গ্রামেও প্রায় একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইমাম রেজাউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, বৃষ্টির জন্য নামাজ দেরিতে পড়তে হয়েছে। প্রায় শতাধিক মুসল্লি চটকাবাড়িয়া মসজিদে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন। উপজেলা জুড়ে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। নামাজের পর পশু কোরবানিও দেওয়া হয়েছে।
হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ জানান, উপজেলার চটকাবাড়িয়া, ভালকি ও নিত্যানন্দপুর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশের একটি বাহিনী পর্যবেক্ষণ করছিল।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩ গ্রামের তিন সহস্রাধিক মানুষ একদিন আগেই ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়, সহস্রাইল, মাইটকুমড়া, ভুলবাড়িয়া, রাখালতলী, বারাংকুলা, দড়ি সহস্রাইল এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইছাপাশা ও শুকুরহাটাসহ ১৩টি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেন।
আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বোয়ালমারীর কাটাগড় গ্রামের বাসিন্দা মাহিদুল হক। তিনি মূলত এ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, যারা মির্জাখীল পীরের অনুসারী তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে থাকেন। সব মিলিয়ে হাজার তিনেক মানুষ আছেন যারা আমরা চট্রগ্রাম পীরের অনুসারী। আগে প্রায় বিশ হাজার মানুষ ছিল। নতুন প্রজন্মের অনেকে এ নিয়ম মানতে চায় না।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটে বুধবার সকাল ৯টায় দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়ায় জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজাহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাজেদুল ইসলাম। তবে বৃষ্টির কারণে জামাতে মুসল্লির সংখ্যা কম ছিল। পরে মসজিদের ভেতরে নামাজ আদায় করেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রহবী, মুন্সিপাড়া, আমিনগঞ্জ, বালাপাড়া, পার্শ্ববর্তী আদিতমারী উপজেলার নামরী গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ পালন করে থাকেন।
মুন্সীপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাজেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারে সুন্দ্রাহবিসহ চাপারহাটের চন্দ্রপুর গ্রামের বালাপাড়া ও পাটগ্রাম দহগ্রামে ঈদের জামাতে নামাজ পড়েন। আমরা আশা করছি, দেশের মানুষ একদিন সৌদি আরবের চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ পালন করবেন। সরকারও আমাদের সমর্থন করবেন। তাহলে দেশের মানুষ একই সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পাবেন বলে ইমামের বিশ্বাস।
পিরোজপুর
পিরোজপুরের ৮ গ্রামের ৭ শতাধিক পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করেছে। তারা শুরেশ্বর পীরের অনুসারী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া, কচুবুনিয়া, সাপলেজা, ঝাটিবুনিয়া, খেতাছিড়া ও চকরগাছিয়া গ্রামের প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার, জেলার কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠী গ্রামের ৪০ পরিবার, জেলার নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ৬০ পরিবার ঈদ উদযাপন করছেন।
জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুব আলম বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাপলেজা ইউনিয়নসহ মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় শুরেশ্বরের অনুসারীরা আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন।
জেলার নাজিরপুরের শেখমাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান আতিয়ার জানান, এই ইউনিয়নের খেজুরতলা বাজার পাশ্ববর্তী কয়েকটি পরিবার রয়েছে যারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে। সকালে তারা জামায়তে নামাজ আদায়ের মধ্যেমে দিনটি উদযাপনের সূচনা করেছেন।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবছরেও মঠবাড়িয়ায় শুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র ঈদুল আজহাউদযাপন করছেন। আশা করছি কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটবে না। তাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।
মাদারীপুর
মাদারীপুর জেলার ৪০ গ্রামের মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। ৪০ গ্রামের অন্তত অর্ধলক্ষাধিকের বেশি মানুষ আজ ঈদুল আজহা পালন করতেছে। সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক গ্রামের চর কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুরের পীর খাজা শাহ সূফী সৈয়দ নূরে আক্তার হোসাইন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে শরীয়তপুরের হযরত সুরেশ্বরীর (রা.) ভক্ত-অনুসারীরা আজ সৌদি আরবের সাথে মিলে রেখে ঈদ উল আজহা উদযাপন করেন।পরে তারা আল্লাহ তালার নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করে সুন্নাতি তরিকায় তা বন্টন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরীর (রা:) মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলাসহ দেশের প্রায় দেড় কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান বুধবার ঈদ পালন করেন। সুরেশ্বর দরবার শরিফের মুরিদরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ও পঞ্জিকার তিথি দেখে একদিন আগে ঈদ উল আযহা উদযাপন করেন।
সে হিসেবে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা, জাজিরা, মহিষেরচর, জাফরাবাদ, চরকালিকাপুর, তাল্লুক, বাহেরচরকাতলা, চরগোবিন্দপুর, আউলিয়াপুর, ছিলারচর, কুনিয়া, মস্তফাপুর, কালকিনির সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, আলীনগর, বাঁশগাড়ী, খাসেরহাট, আউলিয়াপুর, রামারপোল, ছবিপুর, ছিলিমপুর, ক্রোকিরচর, সিডিখান, কয়ারিয়া, রমজানপুর, বাটামারা, রাজারচর, শিবচরের পাচ্চর, স্বর্ণকারপট্রিসহ মাদারীপুর জেলার চারটি উপজেলার অন্তত ৪০গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার মানুষ ঈদ উদযাপন করেন।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার চার গ্রামে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত দুই উপজেলার ৯ টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাতে অংশ নেয় এই চার গ্রামের মুসল্লিরা।
গ্রামগুলো হলো- নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রাম।
বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বসন্ত বাগ গ্রামের সিনিয়র মাদ্রাসা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ পোদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ, বসন্তবাগ গ্রামের নগর বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, পশ্চিম বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, ফাজিলপুর গ্রামের দায়রা বাড়ির জামে মসজিদ, বেগমগঞ্জের জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষীনারায়নপুর গ্রামের দায়রা বাড়ি কাছারীঘর, হরিণারায়নপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফ মসজিদে নামাজ আদায় হয়।
কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী নোয়াখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়িতে দরবার শরীফ। প্রতিবছর আমরা ঈদের নামাজ সৌদির সাথে মিল রেখে আদায় করি। হোক সেটা ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহা।
রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফের মুসল্লি আবু তাহের ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দাদারা পালন করেছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আমরা ঈদের নামাজ আদায় করলাম। এটাই আমাদের আনন্দ। আজ আমরা খুব খুশি। আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করি। প্রায় ১০০ বছরের বেশি হবে। আজ ঈদুল আজহার নামাজ শেষে সারাবিশ্বের মুসলিমদের জন্য দোয়া করেছি।
নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পটুয়াখলী
পটুয়াখালীর ৪০ গ্রামের বিশ হাজারেরও বেশি মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। বুধবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় বদরপুর দরবার শরীফ জামে মসজিদে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বদরপুর দরবার শরীফ মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গনি। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন।
জানা গেছে, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফ, বাউফল, গলাচিপা ও কলাপাড়াসহ মোট ৪০ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। শত বছরেরও বেশি সময় থেকে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে এক দিন আগে রোজাসহ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন তারা। তাদের মতে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সেদিন থেকেই রোজা রাখা এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করা উচিত।
বদরপুর দরবার শরীফ মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১৯২৮ সাল থেকে আমরা রোজা ও ঈদ পালন করছি। আজ আমাদের সঙ্গে জেলার ৪০ গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩০ স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি। অন্যদিকে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের আরেক পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।
জানা যায়, প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১৯২৮ সালে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক (র.)। তার অনুসারীরা প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং আজহা উদযাপন করে থাকেন। সেই থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, ভোলাচোঁ, ঝাকনি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর ও সুরঙ্গচাইল গ্রাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, টোরা মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বাসারা, সাচনমেঘ, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি, লতুর্দী, সাতানী ও দক্ষিণ মাথাভাঙ্গার আংশিক, আমিয়াপুর গ্রামের একাংশ, মধ্য ইসলামবাদ গ্রামের একাংশ, গাজীপুর গ্রামের একাংশ, ফরাজীকান্দি, রামদাশপুর, চরমাছুয়া, হাজিপুর, দক্ষিণ রামপুর, সরকারপাড়া ও ঠাকুরপাড়ায় এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন গ্রামবাসীরা।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের প্রায় দুই হাজার মুসল্লি পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। বুধবার (২৮ জুন) জেলার ৬টি উপজেলায় সৌদির সঙ্গে মিল রেখে তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
আজ সকাল ৮টায় দিনাজপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে শহরের ইন্টারন্যাশনাল ফ্যামেলি কেয়ার মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের ইমামতিতে নারী-পুরুষসহ দুই শতাধিক মুসল্লি পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।
এছাড়া শহরের নিউটাউন, ফুলতলা, কাচারির পেছনে ইসলামবাগ, কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ও গড়েয়া, বিরামপুর উপজেলার দুইটি গ্রামে, চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া গ্রাম, বিরল উপজেলার কামদেবপুর ও কাজিপাড়া ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ উদযাপন কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন জানান, এবার জেলার প্রায় ৪৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চিরিরবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রশিদ বলেন, চিরিরবন্দর উপজেলা রাবার ড্যাম এলাকায় সৌদির সঙ্গে মিলে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মুসল্লি স্থানীয় একটি মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ হতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের চার উপজেলায় পাঁচটি ঈদ জামাত ও কোরবানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলায় এসব ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে জেলার রৌমারীর শৌলমারী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গয়াটাপাড়া গ্রামে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপ কুমার সরকার জানান, সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রৌমারীর গয়াটা গ্রামে প্রায় ৫০-৬০ জন মুসল্লি ঈদ জামাতে অংশগ্রহণ করেন। পরে তারা পশু কোরবানিও দেন।
চর রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের করাতিপাড়া গ্রামে এবং ঢুষমারা থানাধীন চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ নটারকান্দি গ্রামের হাজিপাড়া কওমি মাদ্রাসা মাঠে সকালে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘প্রতি বছরেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আমরা দুটি ঈদ পালন করি। সব মুসলিম দেশে আজ ঈদ উদযাপন হচ্ছে।’