এর মধ্যে পাবনায় তিনজন, বগুড়ায় দুইজন, রংপুরে দুইজন, মুন্সীগঞ্জে দুইজন, মাগুরায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন ও বরিশালে একজন মারা গেছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পাবনায় গুলিতে নিহত ৩
পাবনা শহরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলেন— পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং পাবনা শহরের আরিফপুরের মাহিবুল (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী।
রোববার বেলা ১১টার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের গেটে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশাল মিছিল নিয়ে পাবনা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। বেলা ১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলি করেন। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এসময় শিক্ষার্থীরা পাল্টা আক্রমণ করে আবু সাঈদের দুই সহযোগীকে পিটিয়ে আহত করেন এবং তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
বগুড়ায় সংঘর্ষে নিহত ২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে বগুড়ায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়ায় দুইজন মারা গেছেন।
বগুড়া শহরে সংঘর্ষে আহত একজকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে আসার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শজিমেক হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রোববার বেলা ১১টার পরে দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হলে পুলিশ সেখানে গুলি ছোড়ে। গুলিতে অনেকে আহত হন।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলায়।
রংপুরে সংঘর্ষে নিহত ২
রংপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে নগরীর সিটি করপোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি ও পায়রা চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন নগরীর টাউন হল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যায়। পরে টাউন হলকেন্দ্রিক অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিলে পাল্টা ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুইজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মুন্সিগঞ্জে গুলিতে দুইজনের মৃত্যু
মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাদাঁনে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মাগুরায় সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত
মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন।
রোববার (৪ আগাস্ট) সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেয়। অভিযোগ, এ সময় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়।