ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় কারাগার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এখানে বন্দী সংখ্যাও অন্যান্য কারাগারের চেয়ে বেশি। এজন্য সকাল থেকে নিয়ে বিকেল পর্যন্ত এই কারাগারের ফটকে ভিড় থাকে স্বজনদের। কেউ আসেন বন্দী স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে, কেউ মুক্তি পাওয়া স্বজনদের নিয়ে যেতে। আবার দিনভর চেষ্টা করেও কেউ স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ফিরে যান মন খারাপ করে।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দী স্বজনের সাক্ষাৎপ্রার্থী শত শত নারী-পুরুষ কড়া রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের মধ্যে শিশুরাও ছিল। আবার কেউ কেউ ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছিলেন। কেউ কেউ কারাগারের ভেতরে স্বজনদের জন্য খাবার পাঠাতে ক্যান্টিনে রুটি, বিস্কুট, কেক, সিগারেট, কেউ আবার কমলা, আপেল, তরমুজ, কলা কিনছিলেন।
আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি কারাফটকে বলেন, ‘আমার ভাইকে অন্যায়ভাবে মাদক মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। দুই মাস পর আজ জামিন পেয়েছেন। তাই উনাকে নিয়ে থেকে বের হচ্ছি।’
নাম প্রকাশ করা না শর্তে ওই মুক্তি পাওয়া ব্যক্তি বলেন, ‘আমি দুই মাস কারাগারে ছিলাম। অনেক কষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে কারাগারে আনা হয়েছে। এতে কষ্ট আরও বেড়েছে।
মুক্তি পাওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি যে ওয়ার্ডে ছিলাম সেই ওয়ার্ডে ২৪ জন কয়েদি ছিলেন। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর বর্তমানে সেখানে ৪২ জন কয়েদি রয়েছে। ঘুমাতে বসতে এমনকি চলাফেরা করতেও অনেক সমস্যা হচ্ছে।
কারাগারে বন্দী সোহেল মিয়াকে দেখতে রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন তার মা। ছেলে টঙ্গীর একটি দোকানে কাজ করতেন। মাদক মামলায় তার ছেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওই বৃদ্ধা।
রহিমা বেগম নামের ওই নারী বলেন, ‘জেলখানায় যেন কোনো শত্রুকেও না আনে। এখানে অনেক কষ্ট। ছেলের সাথে দেখা করতে এলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়াও ভোগান্তির তো শেষ নেই।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ছেলে আমার রোজগেরে। ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। তাকে ফেরাতেই ঋণ করে কোর্ট-হাজতে জামিনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি।
আব্দুল আওয়াল নামের এক যুবক জানান, প্রতারণার মামলায় তার বাবা কারাগারে রয়েছেন। তাই সকালেই দেখতে এসেছেন। দুপুরবেলা দেখা শেষ হয়েছে। এখন তার জন্য খাবার কিনছেন। এগুলো দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
কারা সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেশি। সেখানে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি বন্দী রয়েছে। এতে খাবার, গোসল, টয়লেটসহ সব ক্ষেত্রেই বন্দীদের পদে পদে সমস্যা হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের আপাতত কোনো পথ নেই।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী কোনো কারাগারে থাকলে পরিপূর্ণভাবে নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না। সুষ্ঠু ম্যানেজমেন্টও হয় না। এ ক্ষেত্রে বন্দীরা রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি কারাগারে সর্বোচ্চ দুই হাজারের বেশি বন্দী রাখা ঠিক না। এর বেশি পরিমাণ বন্দী হলেই সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে রাখা সম্ভব না। কেরানীগঞ্জে বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।