ভাতাপ্রাপ্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. এনামুল হক। হঠাৎ তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ জানতে বই নিয়ে হাজির হন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মৃত। বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত এনামুলসহ চারজনকে এভাবেই মৃত্যুর তালিকায় ফেলেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। তাদের বদলে নতুন চারজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের।
অভিযোগে জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মো. এনামুল হক জুলাই ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস ভাতা না পাওয়ায় ভাতার বই নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কার্যালয় থেকে বলা হয় এ কার্ডের মালিক তো মারা গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৫ অক্টোবর মাসে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূমের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কমিটির সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় বয়স্কভাতা ১৩৮ জন, বিধবাভাতা ২২ জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০ জনসহ ১৭০ জন মৃত ভাতাভোগী পাওয়া যাওয়ায় তাদের স্থলে নতুন সমানসংখ্যক ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তাছাড়া ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর ৬ নম্বর ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে এনামুল হক ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। একই তারিখের অন্য পৃথক তিনটি প্রত্যয়ন পত্রে ছায়রা বেগম, শারিজুন নেছা ও শ্রী অঞ্জলী রানী দেবকে মৃত বলে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়।
এক তরফা ভাবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে দায়ী করেন গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ূম ও ৬ নম্বর ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন।
তারা জানান, সমাজসেবা কার্যালয় থেকে উপরোল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য আমাদের বলা হলে আমরা তা দিই। পরে জানতে পারলাম উনারা জীবিত। পরে নতুন করে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তাদের ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সব ভাতাভোগীর হালনাগাদ তথ্য সব ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা যাচাই-বাছাই করে প্রত্যয়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিই।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে যাদের মৃত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদের পুনরায় ভাতার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও বলে দিয়েছি।