ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির বিনিয়োগ থেকে সরে আসতে জি-৭ (জি-সেভেন) ভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জলবায়ু সচেতন তরুণ প্রজন্ম। পাশাপাশি টেকসই নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ধর্মঘটে এ আহ্বান জানান ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সদস্যরা। এ সময় তারা জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থায়ন বন্ধ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি, প্রাথমিকভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর দেশের নির্ভরতা কমানোর দাবি জানান।
অক্সফামের তথ্যের বরাত দিয়ে তারা বলেন, উন্নয়ন অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা জি-সেভেন গ্রুপ এখনো দেয়নি।
জাপানের হিরোশিমায় চলমান (১৯-২১ মে) ৪৯তম জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা জি-সেভেন দেশগুলোর নেতাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে ব্যয়বহুল ও জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করতে এবং টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের আহ্বান জানান। জি-সেভেন ভুক্ত দেশগুলোর সরকার উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় জোর দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আর্থিকভাবে ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে– সমাবেশে এমনটাই আশা করেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা।
তারা বলেন, অপরীক্ষিত, বিতর্কিত এবং ব্যয়বহুল প্রযুক্তি, হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়ার মতো ভুয়া সমাধানগুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করার পাশাপাশি জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, এবারের জি-সেভেন সম্মেলনে বিশ্বনেতারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের মতো জরুরি বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জি-সেভেন দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিসমূহ আসলে স্থবিরই হয়ে আছে। উল্টো কিছু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিপরীত দিকে হাটছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো – এই আলোচনা এখনো জি-সেভেন দেশগুলোর সরকারের নিজেদের মধ্যেই বিলম্বিত হচ্ছে। তাদের উদ্যোগগুলোর বিষয়েও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কোনো স্পষ্ট কিছু জানতে পারছে না। তরুণ জলবায়ু কর্মীরা কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধ এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য জি-সেভেন দেশগুলোর প্রতি জোর দাবি জানান।
তারা মনে করেন, বিশ্ব নেতাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা। এলএনজিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা উচিত কারণ এটি একটি কার্বন-ভিত্তিক ক্ষতিকর জ্বালানি।
সমাবেশের সভাপতি ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিজের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, আমাদের কেন ক্ষতিকারক এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তা বুঝতে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করার সময় কিন্তু নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব এখন জলবায়ু ও জ্বালানি সংকটে ভুগছে। তাই কাজ করার সময় এখনই।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং জি-সেভেন দেশগুলোর মতো বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। এরকম জরুরি অবস্থায় আমাদের আর দেরি করার সময় নেই, এখনই কাজে নামতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা এবং বরাদ্দের অন্তত ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের জন্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সমাবেশে যোগ দিয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র- ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমাদের অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে কাজ করতে হবে। কারণ তারা দুটি আন্তঃসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ। আসুন আমরা ব্যক্তি, ব্যবসা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিত হই, যাতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগে সুবিধা হয়। এর মাধ্যমে যেন টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পথ প্রশস্ত করা যায়।