জি এম কাদেরের নেতৃত্বে থাকা জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী জোট না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান রওশন এরশাদ। সেখানে দুই নেতা বৈঠক করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে অবহিত করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কিছু অনুরোধ করেন রওশন।
গণভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে রওশন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ তবে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রওশন বলেন, ‘এখন তো আর সময় নেই। আর কী বলবেন?’
জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে রওশন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আমার ছেলের জায়গায় উনি ইলেকশন করছেন। ওর কথা তার মনে নেই।’
এসময় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তিনি (রওশন এরশাদ) কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন আমাদের নেতা কাজী মামুনুর রশিদ।
এরপর কাজী মামুনুর রশিদ রওশন এরশাদের লিখিত একটি বক্তব্য সাংবাদিকদের দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, জি এম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দখল করেছেন। সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সুকৌশলে তাকে, সাদ এরশাদকে এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে দিয়েছেন। দলের মধ্যে ‘ক্যু’ করে নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে জি এম কাদেরদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট না করার অনুরোধ করেছেন।
নির্বাচন অধিক গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতীয় পার্টি যাতে এককভাবে সারা দেশে প্রতিযোগিতামূলকভাবে নির্বাচন করে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন রওশন।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন ছেলে সাদ এরশাদ ও তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্।
পার্টিকে ভাগ করে ফেলেছেন জিএম কাদের : সাদ এরশাদ
বৈঠকের পর সাদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পার্টিকে ভাগ করে ফেলেছেন জিএম কাদের। যেখানে মা বেঁচে আছেন, আমিও সুস্থ। আমি রংপুর-৩ আসনের বর্তমান এমপি। আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে উনি নিজে দাঁড়িয়েছেন। এটা ঠিক করেননি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছি। দলের মধ্যে যে বোঝাপড়া নেই, দলকে যে ভাগ করা হয়েছে এটা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটা শুনে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন, তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
সাদ বলেন, জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমের সামনে আমার মা ও আমাকে নিয়ে যেভাবে বক্তব্য রাখেন তা ঠিক নয়। এটা সবাই দেখেছেন। আমার মায়ের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে, এটাও বলেছেন। কোনো নেতার এটা বলা ভালো দেখায় না।
নিজেদের জাতীয় পার্টির মূল পক্ষ দাবি করে সাদ বলেন, রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ যদি না থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি কোথায়? তাহলে তো জি এম কাদেরের কাছে চলে যাবে।
পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদ বলেন, দল গোছাব, জনগণের সঙ্গে থাকব।
জাতীয় পার্টি কি সম্মেলন করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সময় হলে দেখা যাবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি রওশন ও তার ছেলে সাদ এরশাদ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন নিয়েছেন, যেখানে বর্তমান সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ।