জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার ও সংসদ ভবন এলাকা থেকে তার কবর সরানোর দাবি করেছে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। সোমবার (৭ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’র আলোচনা সভায় তারা এ দাবি করেন।
শহীদ সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নুরে আলম বলেন, জিয়াউর রহমান আমার বাবাসহ হাজার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-সৈনিকদের হত্যাকারী। আমার বাবাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের পরিবারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে তিনি জেলে আছেন। সেই বিএনপি এখন কিসের মানবাধিকারের কথা বলে।
শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তমের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ বলেন, আমার চেহারায় আমার বাবার মুখ ভাসে। স্বাধীন দেশে আছি, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। তারপরও কী আমার বাবার হত্যার বিচার পাব না। বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট সাঈদুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন বলেন, বিচার অবশ্যই করা উচিত- এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার হয়েছে। জিয়াউর রহমান যে ১৪০০ সেনা-বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, তার বিচারও হওয়ার দরকার।
শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমের কন্যা নাহিদ ইজাহার খান বলেন, আমার বাবাকে সংসদ ভবনে হাঁটার সময় হত্যা করা হয়। আমি বয়স তখন ৫ বছর, আমার ভাই ৮ বছর। আমি তখন বুঝতাম না মৃত্যু কী জিনিস। আমরা দুবছর কোনো স্কুলে পড়তে পারিনি। জিয়াউর রহমানের এখন যে ছবি আছে- দেখেন কী হিংস্র চোখ। তাদের বিচার হওয়া উচিত। সংসদ এলাকায় খুনি জিয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের যে কবর রয়েছে সেই কবর সরিয়ে ফেলা হোক।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মনের দাবি ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই দাবি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করিয়েও দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি আশা করি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারও এই বাংলার মাটিতে দেখতে পাব। তাদের পরিবার জীবিত অবস্থায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যাবে।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের কন্যা নাহিদ ইজাহার খান, শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের কন্যা মাহজাবিন খালেদ। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড বিষয়ের গবেষক আনোয়ার কবির।