অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটে জিতলে সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার করবে বিএনপি। পাশাপাশি সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। ফলে দেশে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই কোনো আইন প্রণয়ন বা বাতিল করতে পারবেন না। সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের অনুমোদনের মাধ্যমে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী বর্তমান সরকারের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার হবে।
বরিশাল প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শুক্রবার বিকালে বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে বিভাগের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। সঞ্চালনা করেন মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন।
সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ও মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশের জন্য যা কিছু ভালো, মানুষের মুক্তির জন্য যা কিছু দরকার সব হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। এই জাতীয় সরকারের কথা অতীতে কোনো সরকার বলেনি। কারণ যারা সরকারে এসেছে সরকার গঠন করেছে তারা মনে করেছে আমরাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং রাষ্ট্রের মেরামত দরকার বা রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা আমরাই করবো।
তিনি বলেন, বিএনপি জয়ীর সঙ্গে বিজিতার হাতে হাত মিলিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বাস করে। আর সেই কারণেই সুষ্ঠু ভোট হলে আগামী নির্বাচনে ২৯০ আসন বিএনপি একাই পাবে। সুতরাং সেখানে দাড়িয়ে বিএনপি চাইলে যেকোনো পরিবর্তন একাই করতে পারে। কিন্তু বিএনপি ওয়াদা করছে, আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পায় সব দল মতের মানুষকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেখানে ছোট ছোট দলের অভিজ্ঞ দক্ষ নেতাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তারা নির্বাচনে হারলো না জিতল সেটা বড় বিষয় নয়।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সেই দলটি স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে না। দ্বিতীয়ত, এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের চেয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে জবাবদিহিতা আরও বেশি শক্তিশালী থাকে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে সদস্যদের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিপক্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বাংলাদেশের দায়িত্ব একমাত্র বিএনপিই নিতে পারে। সংসদে ভারসাম্যের জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা দরকার। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাম্মি আক্তার বলেন, বরিশালের সংগ্রামী মানুষ চোরের দলকে খাদে ফেলে দিয়েছে। তাই নতুন বাংলাদেশকে গড়তে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সরকার দরকার।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলী আহম্মদ বলেন, আজ গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা ব্যবস্থা অনুপস্থিত। তাই সরকার রাষ্ট্রের টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। লুট ঠেকাতে রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন। বরিশাল জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু বলেন, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে ঠেলে দিয়েছে সরকার। তাই রাজপথে লড়াই করে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে হঠাতে হবে। শেখ হাসিনা হটলেই রাষ্ট্র ভালো চলবে না, রাষ্ট্রের সংস্কার দরকার।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজন অধ্যাপক আলী নেছার, ডা. সিরাজুল আলম, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম ফরিদ, সাংবাদিক নাসিম উল আলম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেবুল প্রমুখ।